অনলাইনডেস্ক:-www.tokdernews.comআমরা সবসময় দেশের জনগণের সত্য নিষ্ঠার সঙ্গে ও পাশে আছি।
একটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে ৩০২কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।তবে ১০কোটি টাকায় দফারফা করে অর্থ আত্মসাৎকারীদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।জুলাই বিপ্লবের পর এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে।এ ব্যাপারে নতুন করে তদন্ত হবে বলে জানা গেছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন,এ ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা সম্পূর্ণ তৎকালীন সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী।তারা জানতে পেরেছেন,প্রায় ১০কোটি টাকার বিনিময়ে সে সময়ের সিআইডিপ্রধান তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে চার্জশিটের বদলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করিয়েছেন।
এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল,বাংলাদেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েবসাইট রিং আইডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)শরীফুল ইসলাম,তার ভাই সাইফুল ইসলাম ও স্ত্রী আইরিন ইসলামের বিরুদ্ধে।সিআইডি প্রথমে জানিয়েছিল,ওই অভিযুক্তরা রিং আইডির হিসাব থেকে প্রায় ৩৩কোটি টাকা শেয়ারবাজারে স্থানান্তর করে।
প্রায় এক বছরের অনুসন্ধান শেষে ২০২২সালের ৪আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করে সিআইডি।এরপর আরও এক বছর তদন্ত শেষে গত বছরের ১৯নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান।
তিনি মামলাটির দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা।রিং আইডির মামলায় সিআইডির চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরা।তারা বলছেন,সাধারণত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয় প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে।রিং আইডির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে সংস্থা মামলা করেছে,তারাই আবার বলছে অভিযোগ সঠিক নয়।
২০২১সালে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি)তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি(বর্তমানে ডিআইজি পদে পুলিশ সদর দপ্তরে)কামরুল আহসান জানান,সিআইডির অনুরোধে রিং আইডির প্রায় ২০০কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক জব্দ করে।তাদের আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ আরও বেশি বলে জানান।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনের পর তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান,রিং আইডির মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য-উপাত্ত তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই পেয়েছিলেন।আর সেসব তথ্যের ভিত্তিতেই মানি লন্ডারিংয়ের মামলা হয়েছিল।এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মীর কাশেম আলী বলেন,আমি মামলাটির তদন্ত শেষ করতে পারিনি।তদন্ত চলাকালে বিভিন্ন জায়গায় তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম,কিছু তথ্য এসেছিল।
এর মধ্যে তৎকালীন সিআইডিপ্রধান আমাকে ডেকে একজনের নাম বলে তার কাছে মামলার কাগজপত্র বুঝিয়ে দিতে বলেন।আর আমাকে লক্ষ্মীপুরে বদলি করে দেন।পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান তার প্রতিবেদনে বলেছেন,প্রতারণামূলকভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় ও আত্মসাৎ এবং অবৈধভাবে শেয়ার মার্কেটে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা বিদেশে স্থানান্তরের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
আর বাদীর আনা এসব অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে তথ্যগত ভুল হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।এর আগে গুলশান থানায় করা মানি লন্ডারিং মামলায় বাদী ও একই সংস্থার সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের এসআই আল ইমাম জানান,২০১৫থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৩৭৭কোটি টাকার লেনদেন হয়।এর মধ্যে ৩০২কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়।প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে এই অর্থের মধ্যে ৩৭ কোটি টাকা পাচার করেছেন রিং আইডির মালিকেরা।জানতে চাইলে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের তৎকালীন ডিআইজি(সম্প্রতি তিনি নৌপুলিশের প্রধান হয়েছেন)কুসুম দেওয়ান এ প্রতিবেদককে বলেন,চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি আমার জানা নেই।
তবে সে সময়ে সিআইডিপ্রধান এবং তদন্ত কর্মকর্তাই সেটা ভালো বলতে পারবেন।জানা যায়,রাজধানীর ভাটারা থানায় করা প্রতারণার মামলায় ২০২১সালের ১অক্টোবর সকালে রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে গুলশানের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে অর্থ আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় সংস্থাটি।একই বছরের ১১অক্টোবর রিং আইডির অন্যতম এজেন্ট রেদোয়ান রহমানকে(২২)রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
ওই দিন সকালে মালিবাগে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,আইডি খোলার নাম করে এবং আয়ের নানান প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রেদোয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়।তিনি ছয় শতাধিক মানুষের কাছে আইডি বিক্রি করে প্রায় ১কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এত সব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের অভিযুক্ত করার পরও আবার কেন সেই দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো-এ প্রশ্নের উত্তর জানতে যোগাযোগ করা হয় সিআইডির তৎকালীন প্রধান সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়ার সঙ্গে।
তিনি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন,আমার বিরুদ্ধে যে দশ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তা সঠিক নয়,যা বলা হচ্ছে তা ফালতু কথা।
একটা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকেন।আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।অথবা ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমের এস এস(বিশেষ পুলিশ সুপার)ভালো বলতে পারবেন।ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমের এস এস মুহাম্মদ বাছির উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
সূত্র:-অনলাইন তোকদার নিউজ।
Copyright © 2015-2025 www.tokdernews.com
সাহসিকতা•সততা•সাংবাদিকতা:-