ধর্মবিশ্বাসের কারণে ইসলামে কাউকে নিপীড়ন করার ইতিহাস নেই,বরং সব ধর্মের লোকদের ইসলামী রাষ্ট্রে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর নবী(সা.)মদিনায় যে রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন সেখানে সব সংখ্যালঘুর অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল।
সংখ্যালঘু ও অমুসলিমদের অধিকার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন দ্বিনের ব্যাপারে যারা(অমুসলিম)তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের নিজ দেশ থেকে বহিষ্কার করেনি,তাদের(অমুসলিম)প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ নিষেধ করেননি।
সুরা:মুমতাহিনা,আয়াত ৮:- অমুসলিমদের ব্যাপারে মহানবী(সা.)এর বাণীগুলোর প্রতি চোখ বুলালে আমরা এক অসাধারণ চিত্র দেখতে পাই।
মহানবী(সা.)বলেছেন যে ব্যক্তি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিপ্রাপ্ত কোনো লোককে হত্যা করে,সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।
(সহিহ বুখারি,হাদিস ৭৯১৪).
ইসলামের ইতিহাসের কোনো পর্যায়ে অমুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর মুসলমানরা আক্রমণ করেনি এবং তাদের নির্বিচারে হত্যা করেনি। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া(সম্মুখ লড়াই বা বিরোধ)মুসলিম সেনাপতি বা রাষ্ট্রপ্রধানরা অমুসলিমদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর নির্দেশ দেননি। বরং যুদ্ধের সময়ও অমুসলিমদের ওপর এবং তাদের উপাসনালয়ের ওপর আক্রমণ করাকে মহানবী(সা.)নিষেধ করেছেন।
মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক,হাদিস ৯৪৩০:- অথচ আমরা মুসলিম সংখ্যালঘু জনগণের ব্যাপারে দেখি তার উল্টো চিত্র।ইতিহাসের গভীরে যাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে,তারা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে খ্রিস্টের চার্চ নিরপেক্ষ ছিল বরং চার্চের পাদ্রিরা যত নির্দোষ ব্যক্তির রক্ত ঝরিয়েছে,মানবজাতির ইতিহাসে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান তা করতে পারেনি।যেসব নর-নারী চার্চকে অমান্য করেছে অথবা অন্য কোনো ধর্মবিশ্বাসের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে,চার্চ তাদের প্রতি চরম নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে।
১৫২১সালে প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধিতাকারীদের হত্যা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য পঞ্চম চার্লস আদেশ জারি করেছিলেন।
গোঁড়া খ্রিস্ট ধর্মমত গ্রহণে অস্বীকৃতির শাস্তি ছিল আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, ফাঁসি,জিহ্বা উপড়ে ফেলা অথবা মুচড়ে দেওয়া।
ইংল্যান্ডে প্রটেস্ট্যান্টরা বিরোধীদের দমনের জন্য তাদের কারারুদ্ধ, কলঙ্ক চিহ্নিত,অঙ্গচ্ছেদ,বেত্রাঘাত ইত্যাদি শাস্তির ব্যবস্থা করেছিল। স্কটল্যান্ডে ভিন্ন মতের লোকদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের কান গোড়া থেকে ছিঁড়ে ফেলা হয়।জ্বলন্ত লোহার ছ্যাকা দেওয়া হয় তাদের গায়ে।তাদের হাতের আঙুলগুলো টুকরা টুকরা করা হয়।পায়ের হাড়গুলো বুট জুতা দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
নারীদের প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করতে করতে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো।ক্যাথলিকদের নিপীড়ন ও ফাঁসি প্রদান করা হতো।সব খ্রিস্টানের মনোভাব ছিল একই ধরনের।মুসলিম ও ইহুদিরা খ্রিস্টীয় জগতের দৃষ্টিতে ছিল অগ্রহণযোগ্য।ইংল্যন্ডে ইহুদিদের নিপীড়ন করা এবং ফাঁসি দেওয়া হতো।স্পেনে মুসলিমদের পোড়ানো হয়েছিল।খ্রিস্টান ও ইহুদিদের মধ্যে বিবাহবন্ধন আইনত বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল।
ওয়েস্টস ট্রিবিউটস টু ইসলাম গ্রন্থের লেখক অমুসলিম মনীষী বার্ট্রান্ড রাসেল সংখ্যালঘুদের(বিশেষ করে মুসলিম)প্রতি খ্রিস্টান ও ইসলামের মনোভাবের তুলনা করে বলেছেন,খ্রিস্টধর্ম তার নির্যাতনের প্রস্তুতির জন্য অন্যান্য ধর্ম থেকে স্বাতন্ত্র্যতা অর্জন করেছিল।
মুসলিম খলিফারা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রতি অনেক বেশি দয়ালু ছিলেন ইহুদি ও মুসলমানদের প্রতি খ্রিস্টান সরকারগুলোর তুলনায়। খলিফাদের রাজত্বকালে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা নির্যাতন থেকে রক্ষা পেত, যদি তারা জিজিয়া প্রদান করত।যে মুহূর্তে রোমান সম্রাট খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলেন তখন থেকে খ্রিস্টধর্ম ইহুদি বিদ্বেষ প্রচার করে এসেছে।
ক্রুসেডের ধর্মীয় উন্মত্ততা পশ্চিম ইউরোপে সুসংগঠিতভাবে(সম্প্রদায় বিশেষের)হত্যাসাধন ও লুণ্ঠনের পরিণতি কাজ করেছে।খ্রিস্টধর্ম নৈতিক মানোন্নয়ন ঘটিয়েছিল।এমন বক্তব্য দেওয়া সম্ভব শুধু ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে কিংবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হলেই।
অন্য একজন অমুসলিম পণ্ডিত স্মিথ ওমর(রা.)কর্তৃক জেরুজালেম বিজয়ের সঙ্গে খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের কার্যকলাপের তুলনা করে বলেছেন,জেরুজালেম ওমর(রা.)এর কাছে শর্তাধীনে আত্মসমর্পিত হয়।তিনি ছিলেন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা।৬৩৭সালে দীর্ঘস্থায়ী অবরোধ সংঘটিত হয়েছিল।অবরোধকালে অনিবার্য ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া খ্রিস্টানদের কোনো সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়নি।
যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া এক বিন্দু রক্তও সেদিন ঝরেনি।ওমর(রা.)প্রধান পাদ্রিসহ শহরে প্রবেশ করেন।তখন খলিফা তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে আলাপ করছিলেন।নামাজের সময় হলে পাদ্রি তাঁকে চার্চ অব হলি সেপালক্যার’গির্জায় নামাজ পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।কিন্তু ওমর (রা.)এতে সম্মত হননি।
তাঁর আশঙ্কা ছিল,পরবর্তীকালের মুসলমানরা একই ধরনের অধিকার দাবি করতে পারেন।সেখানকার অধিবাসীদের আত্মসমর্পণ চুক্তির শর্ত মোতাবেক তাদের উপাসনার স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে।অথচ কিছুকাল পর পবিত্র নগরীর আবার ক্রুসেডারদের কাছে পতন ঘটে।১০৯৯সালে শহরটি আবার দখল হয়ে যায়।এরপর তিন দিন যাবৎ খ্রিস্টানরা নির্বিচারে নারী,পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করেছিল।তখন ৭০হাজার মুসলিমকে তলোয়ারের আঘাতে হত্যা করা হয়,যার মধ্যে ১০হাজার নিহত হয়েছিল ওমর(রা)-এর মসজিদে।
মুসলিমদের অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি মনোভাব এবং অমুসলিমদের মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি মনোভাবের তুলনা করতে গিয়ে মিসরের বিখ্যাত দার্শনিক ও ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ মুহাম্মদ কুতুব লিখেছেন, খ্রিস্টান গির্জা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তদন্ত আদালত প্রধানত স্পেনের মুসলিমদের সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার জন্য স্থাপন করা হয়েছিল।
এসব আদালত মুসলিমদের ভয়াবহভাবে নির্যাতন করেছে,যা ইতোপূর্বে কখনো দেখা যায়নি।মানুষকে জীবন্ত দগ্ধ করা হয়েছে।তাদের নখ উৎপাটিত করা হয়েছে।তাদের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং তাদের হাত-পা কর্তন করা হয়েছে।এসব নির্যাতন এ জন্যই করা হয়েছে,যাতে জনগণকে জোরপূর্বক তাদের ধর্ম পরিবর্তনে ও খ্রিস্টীয় মতবাদ গ্রহণে বাধ্য করা যায়।
হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে ইউরোপীয় দেশ যুগোস্লাভিয়া,আলবেনিয়া, রাশিয়া অথবা ইউরোপীয় শাসনাধীন দেশগুলো তথা উত্তর আফ্রিকা, সোমালিয়া,কেনিয়া,জাঞ্জিবার কিংবা অন্যান্য দেশ,ভারত ও মালয়ের মুসলিমদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার লক্ষ্যে।এসব ধ্বংসযজ্ঞ কখনো অপশক্তির নিধন,কখনো শান্তি ও নিরাত্তা বজায় রাখার অজুহাতে করা হয়েছে।
এমনকি আজও মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ, বেশির ভাগ অমুসলিম রাষ্ট্রের মুসলিম সংখ্যালঘু অথবা অন্য সংখ্যালঘুর সঙ্গে যে আচরণ করা হয়,তার চেয়ে অনেক উত্তম।ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের এখনো পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করা হয়।
এরূপ আচরণ ইসরায়েল অধিকৃত আরবভূমি,ইথিওপিয়া,ফিলিপিন্স, মায়ানমার প্রভৃতি দেশেও মুসলিম সংখ্যালঘুদের সঙ্গে করা হচ্ছে।মুসলিমরা নিগ্রহ,সন্ত্রাস,পাশবিকতা,বর্বরতা ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হচ্ছে সর্বত্র।অথচ ইসলামের বিধান এবং মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়িত্ববোধ সম্পূর্ণ ভিন্ন।এর ফলে ইসলামের এই মানবিক সৌন্দর্য আজও মানুষকে মুগ্ধ করে।আজও বিশ্বের দেশে দেশে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে ইসলামের বিজয়।
একেই বলে স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা আছি জনতার পাশে সব সময়।
সূত্র:-অনলাইন তোকদার নিউজ।
Copyright © 2015-2025 www.tokdernews.com
সাহসিকতা•সততা•সাংবাদিকতা:-