অনলাইনডেস্ক:-আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই-এর ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ যেমন বাড়ছে তেমনি একইসাথে যুক্তরাষ্ট্র জোর চেষ্টা শুরু করেছে যেন কৌশলগত-ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রযুক্তিতে চীনের অগ্রগতি যতটা সম্ভব খর্ব করা যায়।
এখন পর্যন্ত এআই-এর প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।এবং চীনের কাছে সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানিতে বিধিনিষেধ জারি করার পর চীনের প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু চীন এই বাধা দূর করতে পারবে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, কারণ এই আই প্রযুক্তিকে নিখুঁত এবং লাগসই করতে এখনও অনেক বছর লেগে যেতে পারে।
এদিকে,যুক্তরাষ্ট্রের বেশ ঘনিষ্ঠ মিত্র অস্ট্রেলিয়ার নৌ-বাহিনী অত্যাধুনিক সাবমেরিন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন কৌশল দিয়ে আগাচ্ছে।
প্রথম কৌশলটি অনেকটা ব্যয়বহুল ও ধীর গতির।এক্ষেত্রে ১৩টি পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন বিধ্বংসী সাবমেরিন তৈরিতে অস্ট্রেলিয়া গড়ে ১৮বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি ব্যয় করবে।এক্ষেত্রে শেষ সাবমেরিনের কাজটি শেষ হতে প্রায় ২০৫০সাল পেরিয়ে যাবে।
দ্বিতীয় কৌশলটি তুলনামূলক সস্তা ও দ্রুত সময়ে। এক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(এআই)চালিত মানববিহীন স্বয়ংক্রিয় তিনটি সাবমেরিন তৈরি করা হবে,যার নাম দেওয়া হয়েছে ঘোস্ট শার্ক।
শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়,বরং যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশ যুক্তরাজ্য,জাপান, সিঙ্গাপুর,দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপের নানা দেশের জন্যও সাবমেরিন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রকল্পটি বেশ দ্রুতগতিতে এগোনোর চেষ্টা করা হচ্ছে।কেননা ইতোমধ্যেই চীন সামরিক ক্ষেত্রে বৈশ্বিকভাবে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে।গত এপ্রিলে অস্ট্রেলীয় সরকারের ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজিক রিভিউতেও এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
একদিকে,যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।অপরদিকে চীন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যকে রুখতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
এছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রযুক্তির অত্যাধুনিক ব্যবহারও দেখা যাচ্ছে।এক্ষেত্রে এআই ও ঘোস্ট শার্কের মতো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের কার্যকরী ব্যবহার দেশগুলোকে আরও বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।
তবে শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও চীন-যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষই এমন সব যন্ত্র তৈরি করছে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে এআইকে কাজে লাগাবে। এক্ষেত্রে সাবমেরিন,যুদ্ধজাহাজ,ফাইটার জেট,অ্যারিয়াল ড্রোন ইত্যাদিতে এআই প্রযুক্তি যুক্ত করা হচ্ছে।এই পদক্ষেপগুলি মানুষের পাশাপাশি লড়াইয়ের জন্য ঘাতক রোবট তৈরির ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।
মিলিটারি বিশ্লেষকদের মতে,এই ধরনের রোবটকে প্রথাগত জাহাজ, বিমান কিংবা স্থলে সৈন্যদের সাথে দলে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।যার ফলে ইতিমধ্যেই যুদ্ধের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে শুধু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র তৈরি নয়,বরং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামরিক ক্ষেত্রে মিলিটারি অফিসাররা নানা তথ্য সম্পর্কে জানতে ও লড়াইয়ের কৌশল নির্ধারণ করতে পারবে।এক্ষেত্রে এআই স্যাটেলাইট,রাডার,অনলাইন ট্র্যাফিক,সিগন্যাল ইনটিলিজেন্স থেকে আগত বিপুল পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মতো ব্যাপারগুলো জড়িত।
যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন উভয় দেশই এআই-চালিত ড্রোনের পরীক্ষা করেছে।গত বছর মার্কিন সৈন্যদের এই সংক্রান্তও প্রশিক্ষণের ফুটেজও প্রকাশ হয়েছিল।আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়,ফোর্ট ক্যাম্পবেল,টেনেসিতে ২০২১সালের শেষের দিকে মার্কিন সৈন্যরা ড্রোন পরীক্ষা করছেন। ফুটেজে দেখা যায়,পরীক্ষা চলাকালীন এক ব্যক্তি ভিডিও গেমের মতো চশমা পড়ে রয়েছেন।
চীনের ইন্ডাস্ট্রি ও টেকনোলজি নিয়ে বিশ্লেষণ করা নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক প্রাইভেট রিসার্চ কোম্পানি ডাটেনার তথ্যমতে,চীনা সরকার দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০১১সালে ৩.১মিলিয়ন ডলার এআইয়ে ও ৮.৫মিলিয়ন ডলার মেশিন লার্নিংয়ের গবেষণায় খরচ করেছে।২০১৯ সালে আবার দেশটির এআই খাতে গবেষণা খরচ বেড়ে দাড়ায় ৮৬ মিলিয়নে,আর মেশিন লার্নিং গবেষণায় খরচ বেড়ে দাড়ায় ৫৫ মিলিয়নে।
এ সম্পর্কে মার্কিন সেন্ট্রাল ইনটিলিজেন্স এজেন্সির সাবেক বিশ্লেষক ও ডেটেনার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মার্টিজন রাসার বলেন,সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে,আমরা ঠিক জানি না যে,চীন সামরিক ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহারে ঠিক কতটা ভালো করছে।তবে এটা নিশ্চিত যে,দেশটি ওয়ার্ল্ড ক্লাস গবেষণা করছে।কিন্তু দেশটির পিএলএ এবং পিএলএ এফিলিয়েটেড রিসার্চ প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট করে কী করছে সেটা বোঝা মুশকিল।
এদিকে চীনের সাথে প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশ উদ্বিগ্ন। তারই ফলশ্রুতিতে গত মাসে বাইডেন প্রশাসন একটি নির্বাহী আদেশে চীনে সংবেদনশীল প্রযুক্তির কিছু খাতে মার্কিন বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।কেননা এর ফলে চীনের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভবনা রয়েছে।
★প্রকাশক:- মোঃ মোশারফ হোসেন তোকদার।
★ব্যবস্থাপনা পরিচালক:- মোঃ এম,খোরশেদ আলম,সভাপতি প্রেসক্লাব পীরগাছা,রংপুর বিভাগ।
© All rights Reserved © 2020 গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত এই ওয়েবসাইটি Tokdernews.com বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পোর্টাল।