আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড় সেপ্টেম্বরে

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড় সেপ্টেম্বরে

অনলাইন ডেস্ক:- আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছর।২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)।চলতি বছর নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।এ জন্য সেপ্টেম্বরে শুরু হবে ভোটের মূল তোড়জোড়।সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশন চূড়াস্ত সিদ্ধান্ত নেবে কত আসনে ব্যালট পেপারে ভোট এবং কত আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে।এ ছাড়া সে অনুযায়ী কাগজ সংগ্রহসহ অন্য নির্বাচনী মালামাল কেনাকাটাও শুরু হবে।ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন সেপ্টেম্বরে সংসদ নির্বাচনের মূল কাজ শুরু করবে।এ জন্য পাঁচ মাসের সংক্ষিপ্ত নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা তথা রোডম্যাপও থাকবে।সেই পরিকল্পনা শুধু সীমাবদ্ধ থাকবে নির্বাচন কমিশনের মধ্যে।পরিকল্পনায় নির্বাচনী মাঠের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছক,বিভিন্ন কেনাকাটা,কাগজ-কালি সংগ্রহ থেকে শুরু করে নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের সব খুঁটিনাটি থাকবে।যদিও নির্বাচন কমিশন নীরবেই আগামী সংসদ নির্বাচনের অনেক কাজ এগিয়ে রেখেছে।নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রথম দফায় নির্বাচনী সংলাপ শেষ করেছে,গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ(আরপিও)সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে,ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষে ১৫জানুয়ারি খসড়া প্রকাশ হবে।নতুন দল নিবন্ধনে কার্যক্রম চলছে।ইসির কর্মকর্তারা বলছেন,দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।নির্বাচন কমিশনাররা সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন।ভোটের খরচ কেমন হতে পারে সে বিষয়ে হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে।একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোথায় কোথায় সংঘাত হয়েছে সে এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে।ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই ধরনের পরিকল্পনা থাকবে ইসির।প্রথমত,আগামী বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল দিয়ে ২০২৪সালের জানুয়ারিতে ভোট গ্রহণ।দ্বিতীয়ত,আগামী বছর নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোট অনুষ্ঠান।
এদিকে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বসে নেই রাজনৈতিক দলগুলোও।তারাও নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।নানা হিসাব-নিকাশ চলছে সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে।দলগুলো নিজ নিজ প্রার্থী ঠিক করতে পর্যালোচনা করছে।সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে গতকাল বছরের প্রথম দিন নির্বাচন কমিশনার মো:আনিছুর রহমান বলেন,আমরা আগেই বলেছি যে এ বছর শেষে বা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।তাই কাজের সময়ের সঙ্গে হাঁটলে আর আমাদের হবে না,আমাদের দৌড়াতে হবে।আমরা প্রতিদিনই অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করি।এ ছাড়া ভোটের প্রশিক্ষণ চলছে, চলবে।এই নির্বাচন কমিশনার বলেন,ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করব।আমরা আশা করি যে,আইন সংশোধনের বিষয়টিও আইন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে কয়েক দিনের মধ্যে চলে আসবে।আইনমন্ত্রী বলেছেন,কাজটা প্রায় শেষের পথে,কয়েক দিনের মধ্যেই তারা পাঠিয়ে দেবেন।এ ক্ষেত্রে আমরা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই আইন সংশোধনের কাজ শেষ করতে পারব।সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন,সীমানা নির্ধারণের কাজটা আশা করি জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারব।মে মাসের মধ্যেই যাতে করতে পারি সে চেষ্টা থাকবে।জনশুমারির চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোকে চিঠি লিখেছি।তারা যদি ওটা জুনের পরে করে তাহলে তো সেটা আমলে নেওয়া যাবে না।এ ক্ষেত্রে বর্তমানে যে অবস্থা আছে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে।খুব বেশি আসনের প্রস্তাব আমরা পাইনি।সেগুলোর ওপর কাজ শুরু করেছি।ভোটার তালিকা প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন,২মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।এটার জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা আছে।
ভোট কেন্দ্রের বিষয়ে আনিছুর রহমান বলেন,সীমানা পুর্নির্নিধারণ হলে আগস্টের মধ্যে ভোট কেন্দ্র চূড়ান্ত করা হবে।তবে চূড়ান্ত করতে হয়তো নভেম্বর পর্যন্ত লেগে যাবে।নতুন দলের নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন,নতুন দলের নিবন্ধনের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে।অনেক কাগজ তারা দিয়েছিল।সেগুলো বাছাই করা হয়েছে।নতুন দল নিবন্ধন প্রক্রিয়াও জুনের মধ্যে করে ফেলবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ইভিএমের নতুন প্রকল্পের বিষয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন,ইভিএমের নতুন প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে আছে।আর সরকার থেকে ১৩জন জনবলের অনুমোদন দিয়েছে।এখন ১৩জন জনবল দিয়ে কিন্তু কাজ চালানো যাবে না।অর্থ বিভাগকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বলেছি।এখন যা-ই হোক ইভিএম প্রকল্প দ্রুত পাস হওয়া উচিত।যদি ১৫জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্প পাস না হয় এবং এর পরে অনুমোদন হয়,তাহলে তা আমাদের জন্য খুবই ডিফিকাল্ট হবে।
তিনি বলেন,আমরা ইভিএম নতুন প্রকল্প না হলে হাতে যা আছে তা দিয়ে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু করব।বাকি আসনে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করব।কর্মকর্তাসহ জনবলের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে।পুরো বছরই ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হবে।রোডম্যাপের সঙ্গেই চলছি।পিছিয়ে নেই।
২০১৮সালের ৩০ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।আর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯সালের ৩০জানুয়ারি।সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর।সে হিসাবে ২০২৪সালের ৩০জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ।নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০দিনের কথা বলা হয়েছে।সে হিসাবে ২০২৪সালের ৩০জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।