অনলাইনডেস্ক:- প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে দেয়া পূর্ণাঙ্গ ভাষণ বিজয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তার এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারের সকল কেন্দ্র এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও সেন্টারগেুলো থেকে একযোগে প্রচারিত হয়।
জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ নিচে দেয়া হলোঃ-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম :-
প্রিয় দেশবাসী,
আসসালামু আলাইকুম।
মহান বিজয় দিবস ২০২২উপলক্ষে আমি দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যাঁর নেতৃত্বে ২৩বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং ৯মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
আমি স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা-সৈয়দ নজরুল ইসলাম,তাজউদ্দিন আহমদ,ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে।যাঁরা জাতির পিতার অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচলানায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০লাখ শহিদ এবং ২লাখ নির্যাতিত মা-বোনের প্রতি।সালাম জানাই অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাঁরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন।
আমি গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৯৭৫সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব,তিন ভাই-মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল,মুক্তিযোদ্ধা লে.শেখ জামাল এবং ১০বছরের শেখ রাসেল-কামাল ও জামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল,আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের,মুক্তিযোদ্ধা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, মুক্তিযোদ্ধা কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত,ব্রিগেডিয়ার জামিল এবং পুলিশ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান-সহ সেই রাতের সকল শহিদকে।
বিজয় দিবসে আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাদানকারী বিভিন্ন দেশ ও সেসব দেশের জনগণ, ব্যক্তি এবং সংগঠনের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।বিশেষ করে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বীর সদস্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। তাঁদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ভারতের তৎকালীন সরকার,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সর্বোপরি সাধারণ জনগণকে-যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানিয়েছিলেন,শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং নানাভাবে সহযোগিতা করেছিলেন।
গোটা বিশ্ব আজ এক অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে।২০১৯সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মহামারির কবলে পড়ে বিশ্ব।২০২০এবং ২০২১-এই দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়।অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে।আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ে।
করোনাভাইরাস মহামারির সেই ক্ষতি কাটিয়ে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল,ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।আর এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়,সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক যুদ্ধ।অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাব কোন একক দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না,ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
আপনারা জানেন,সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের প্রাণহানি যেমন কমাতে পেরেছি,তেমনি অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তাঁদের জীবিকা সচল রাখা।করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমরা জরুরিভিত্তিতে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫হাজার শয্যা বৃদ্ধি করেছিলাম। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা জন্য পিপিই,রোগীর জন্য অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর,জরুরি ওষুধসহ সকল উপকরণ সরবরাহ করা হয়।
টিকা পাওয়ার উপযোগী সবাইকে বিনামূল্যে প্রায় ৩৪কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে।এ পর্যন্ত ১৪কোটি ৯০লাখ মানুষ প্রথম ডোজ,১২কোটি ৬৫লাখ ২৫হাজার দ্বিতীয় ডোজ এবং ৬ কোটি ৪৫লাখ মানুষ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন।২০০৯সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২হাজার ডাক্তার এবং ৪০হাজার নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
শিল্পকারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয় তার জন্য এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১লাখ ৮৭হাজার ৬৭৯কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতনভাতা নিশ্চিত করা হয়েছে।৫০লাখ প্রান্তিক মানুষকে দুই দফায় আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।এদের মধ্যে ছিলেন যানবাহনের শ্রমিক,দোকান কর্মচারি,নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক,ইমাম,মুয়াজ্জিন,সংস্কৃতি কর্মীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।বস্তিবাসী,দরিদ্র ও স্বল্পআয়ের মানুষ যাঁরা অন্যের কাছে হাত পাততে পারেন না,হটলাইনে ৩৩৩নম্বরে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঘরে চাল-ডালসহ খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় প্রায় ৭কোটি ৩০লাখ ৫০ হাজার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ১লাখ ৮১হাজার ২৬৬টি।
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং পাল্টা অবরোধের কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও আমদানি-নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে।আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল,গম,চিনি,ভুট্টা,ডাল,রাসায়নিক সারসহ প্রায় সকল ভোগ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।পরিবহন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।যে জাহাজ ভাড়া ছিল ৮০০ডলার তার ভাড়া এখন ৩হাজার ৮০০ডলার,যে গম টন প্রতি ২০০ডলারে পাওয়া যেতো,তা ৬০০ডলারে কিনতে হচ্ছে।আবার নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য কোন কোন দেশ বিনা নোটিশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিচ্ছে।সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পৃথিবীর যেখানেই আমাদের চাহিদার পণ্য পাওয়া যাচ্ছে এবং যত দামই হোক,সেখান থেকেই তা সংগ্রহ করছি এবং যোগান দিচ্ছি।
আমরা ১কোটি পরিবারকে টিসিবি’র ফেয়ার প্রাইজ কার্ড দিয়েছি।এই কার্ডের মাধ্যমে পরিবারগুলো ৩০টাকা কেজি দরে চাল ও সাশ্রয়ীমূল্যে ভোজ্য তেল,ডাল ও চিনি সংগ্রহ করতে পারছেন।৫০লাখ পরিবার ১৫টাকা কেজি দরে মাসে ৩০কেজি চাল কিনতে পারছেন।অসহায় মানুষদের ভিজিডি ও ভিজিএফ-এর মাধ্যমে ৩০কেজি করে চাল প্রতিমাসে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে অনেকেই নানা মনগড়া মন্তব্য করছেন।তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানোর মত রিজার্ভ থাকলেই চলে।বর্তমানে আমাদের পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে।করোনাভাইরাসের মহামারির সময় সব ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি আমদানি,বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি অনেকটা বন্ধ ছিল।সে সময় আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।এই বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস অবস্থায় না রেখে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ দিয়ে আমরা একটা বিশেষ তহবিল গঠন করেছি।সেই তহবিলের অর্থ দ্বারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে ২শতাংশ হার সুদে।ঘরের টাকা সুদসহ ঘরেই ফেরত আসছে।এ অর্থ যদি বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হতো তাহলে ৪/৫শতাংশ হারে সুদসহ ফেরত দিতে হতো।আর তা পরিশোধ করতে হতো রিজার্ভ থেকেই।আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমরা বেশি দামে জ্বালানি তেল,ভোজ্য তেল,গম,ডাল,ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য ক্রয় করে স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছি।
ব্যাংকে টাকা নেই বলে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।অযথা গুজবে কান দিবেন না।বাংকে টাকার কোন ঘাটতি নেই।উপার্জিত টাকা ঘরে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না।আমাদের বিনিয়োগ,রেমিটেন্স প্রবাহ এবং আমদানি-রফতানি পরিস্থিতি সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।
আমাদের বিগত ১৪বছরে দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে পেরেছে।দেশ আজ খাদ্যশস্য-উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।চলতি বছর ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন চালসহ ৪কোটি ৭২লাখ মেট্রিক টন দানাদার শস্য উৎপাদিত হয়েছে।মাছ,মাংস,ডিম,দুধ,সবজি, ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দারিদ্র্যের হার ৪০শতাংশ থেকে ২০শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ডলার থেকে ২,৮২৪ডলারে উন্নীত হয়েছে।সাক্ষরতার হার ৪৫শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫.২%।মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।
আমাদের সরকারের সময়ে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে গত জুন মাসে আমরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছি।এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ১৯জেলাকে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্য অংশের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত করেছে।
অক্টোবর মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পায়রা সেতু।গত নভেম্বরে দেশের ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দেশের অনেকগুলো মহাসড়ক ৪বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে।অন্যগুলোর কাজ চলছে।চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল,ঢাকায় মেট্রোরেল এবং বিমানবন্দর-কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুব শিগগিরই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপন করেছি।
আমরা ২০৪১সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।এজন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু করেছি।জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন রক্ষা পায় এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, সেজন্য আমরা আমরা ডেল্টা প্লান-২১০০প্রণয়ন করেছি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে জন্য কাজ করে থাকে।আমরাই ১৯৯৬-২০০১মেয়াদে বয়স্ক,বিধবা,স্বামী পরিত্যাক্তা, প্রতিবন্ধী এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ প্রান্তিক মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু করেছিলাম।এসব ভাতাভোগীর সংখ্যা এবং টাকার পরিমাণ উভয়ই বৃদ্ধি করা হয়েছে।সমাজের সকল অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ যেমন,হিজড়া,বেদে,হরিজন, সুইপার,চা শ্রমিক-এদের জন্য বাসস্থান,চিকিৎসা, শিক্ষাভাতা ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
১৯৯৬সালে সরকারের দায়িত্বে এসেই আমরা আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন পরিবারকে বিনামূল্যে ঘর প্রদান এবং তাঁদের জীবন-জীবিকার জন্য প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু করি।মুজিববর্ষে আমরা ঘোষণা করেছি কোন মানুষই আশ্রয়হীন থাকবে না।সেজন্য আমরা ভূমিহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি।এ পর্যন্ত ৩৫লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর নির্মাণ করে দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে।তাঁদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রশিক্ষণ ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।আমরা ২কোটি ৫৩লাখ ছাত্র-ছাত্রীকে বিভিন্ন বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিচ্ছি।মাধ্যমিক পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে প্রতিবছর বিনামূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে।
শহর থেকে গ্রাম-প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, সকলের ঘর আলোকিত হয়েছে।সুপেয় পানি,স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।কম্পিউটার শিক্ষা,ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট সংযোগ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে।২কোটি কৃষক কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়ে স্বল্পমূল্যে সার,বীজসহ অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করতে পারছেন।১কোটি কৃষক ১০টাকা দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খুলেছেন।ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাংকে জমা হয়।সেচের জন্য সুলভমূল্যে বিদ্যুৎ এবং কৃষিযন্ত্র ক্রয়ে ৭০%ভর্তুকি পাচ্ছেন।
দেশ যখন নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,সে সময় স্বাধীনতা এবং উন্নয়ন বিরোধী একটি গোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।এদের অতীত ইতিহাস দেখুন।এদের একটা অংশ শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত হয়নি,পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে তারা মানুষ হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন।
কিন্তু,১৯৭৫সালের ১৫আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান এদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে।পুনর্বাসিত হয়ে এরা আবার হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে।
আরেকটি দল যার জন্ম ও লালন-পালন সেনানিবাস থেকে কোন এক জেনারেলের পকেটে,সেই দলটির হাতে শুধুই রক্তের দাগ।এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতির পিতার হত্যা-ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।উর্দি গায়ে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সশস্ত্র বাহিনীর হাজার হাজার দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং অফিসারকে হত্যা করেছে।
এদের প্রত্যক্ষ মদদে হরকাতুল জিহাদ,বাংলাভাই, জমায়িতুল মোজাহিদিন ইত্যাদি জঙ্গি সংগঠন গড়ে উঠে। ২০০৪সালের ২১-এ আগস্ট শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে গ্রেনেড হামলা করে আমাকে এবং আমার দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল।আমি বেঁচে গেলেও সেদিন ২২জন নেতাকর্মী মারা যায়।২০০৫সালের ১৭ই আগস্ট সারা দেশের ৬৩জেলায় একযোগে ৫০০-এর বেশি স্থানে বোমা হামলা চালায়।
২০১৩সালে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াত অগ্নি এবং পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে যা ২০১৫সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।এ সময় তাদের পেট্রোল বোমা হামলায় ৫০০জন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং ৩ হাজার ১৮০জন দগ্ধ হয়।দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণা আজও অনেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন।এ সময় বিএনপি-জামাত জোট সন্ত্রাসীরা হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ধবংস করে।এদের হামলায় সাড়ে তিন হাজার বাস-ট্রাক,১৯টি ট্রেন,৯টা লঞ্চ পুড়ে ধ্বংস হয়।৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর করে এবং ৬টি ভূমি অফিস সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়।
বিএনপি’র শীর্ষ নেত্রী এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত।আরেক শীর্ষ পলাতক নেতা অর্থপাচার,দশ-ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দিতে যাবেন?
দেশের মানুষের উপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত এখন বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করার জন্য কিছু ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করেছে।পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করছে আর দেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে।
বিএনপি ২০০৬সালে এক কোটি ২৩লাখ ভুয়া ভোটারসহ ভোটার তালিকা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টা চালায়। বিএনপি’র দুর্নীতি,সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়।এরপর ২০০৮সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল।৩০০আসনের মধ্যে তারা মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল। একইভাবে ২০১৪ও ২০১৮সালের নির্বাচনেও জনগণ বিএনপি-জামাত জোটকে ভোট দেয়নি। জনগণের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়ে তারা এখন অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
২০০৯সাল থেকে ২০২২সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে।জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত রয়েছে।সে কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকলে কোনদিনই বাংলাদেশ এত উন্নতি করতে পারত না। উন্নয়নশীল দেশ হতে পারত না।এখন,দেশবাসী আপনাদেরই বেছে নিতে হবে আপনারা কী চান-উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা না বিএনপি-জামাত জোটের দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিসহ জীবন?
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের ভোগান্তি হোক,কষ্ট হোক-তা আমরা কখনই চাই না।বৈশ্বিক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল।তা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পাচ্ছে।আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই,বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলসহ কোন জিনিসের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা সমন্বয় করবো।
আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে।আমাদের মাটি ঊর্বর।মাটিতে বীজ ফেললেই যেখানে গাছ জন্মে,ফল হয়, সেখানে বাইরে থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করতে হবে কেন? আমি আপনাদের অনুরোধ করছি,এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখবেন না।সঙ্কট আসবে সঙ্কটে ভয় পেলে চলবে না। জনগণের সহায়তায় আমরা করোনাভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছি।বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও আমরা মোকাবিলা করবো,ইনশাআল্লাহ।এজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।
আমাদের বিজয়ের ৫১বছর পূরণ হলো।আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। পঁচাত্তরের পর ২৯বছর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল এবং তারা দেশের সম্পদ লুটে-পুটে খেয়ে দেশটাকে খোকলা বানিয়েছিল।
এখনও এদেশে একাত্তরের শকুনি এবং পঁচাত্তরের হায়নাদের বংশধরেরা সক্রিয় আছে।সুযোগ পেলেই তারা দন্ত-নখর বসিয়ে দেশটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। সাধারণ মানুষ ভালো আছে দেখলে এদের গায়ে জ্বালা ধরে।দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে।কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এদের চিনে ফেলেছে।ষড়যন্ত্র করে আর তাঁদের বিভ্রান্ত করা যাবে না।
আসুন,এবারের বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সম্মিলিতভাবে শপথ নেই,সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করবো।
আপনারা সকলে ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।সবাইকে আবারও বিজয় দিবসের ★শুভেচ্ছা★
খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
★প্রকাশক:- মোঃ মোশারফ হোসেন তোকদার।
★ব্যবস্থাপনা পরিচালক:- মোঃ এম,খোরশেদ আলম,সভাপতি প্রেসক্লাব পীরগাছা,রংপুর বিভাগ।
© All rights Reserved © 2020 গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত এই ওয়েবসাইটি Tokdernews.com বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পোর্টাল।