বিএনপি মহাসচিব বলেন সরকার পল্টন নিয়ে আতঙ্কে আছেন

বিএনপি মহাসচিব বলেন সরকার পল্টন নিয়ে আতঙ্কে আছেন

সুত্র:অনলাইনডেস্ক:- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,নয়াপল্টনে ১০তারিখের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।ঢাকার সমাবেশ নিয়ে সরকার ভয় পেয়েছে। আমরা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই।কিন্তু তারা তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম করে ফেলেছে।তারা আতঙ্কে ভুগছে।গতকাল বিকালে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।সকাল ১০টা ৩৬মিনিটে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়। মির্জা ফখরুল বলেন,আমরা আবারও বলছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।অন্যথায় এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন,সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।কোন সংবিধান?যেখানে বারবার কাটাছেঁড়া করা হয়েছে নিজেদের প্রয়োজনে সেই সংবিধান?এই সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলতে পারে না। তারা এই সংবিধানের অনেক পরিবর্তন করেছে।নতুন নতুন কালো আইন করেছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,এই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে।যেখানে ফেসবুকে পোস্ট দিলেও উসকানি হিসেবে আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করা হয় এবং জামিন নেই।আমরা তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম।কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা চায় না।তাদের লক্ষ্য যেমন করে পারো বন্দুক-পিস্তল দিয়ে ক্ষমতায় থাকো।আমরা তো তাদের চাকর নই।এই দেশের মালিক জনগণ।দেশের তরুণসমাজের আন্দোলনেই এ সরকারের পতন ঘটবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।মির্জা ফখরুল বলেন,অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে।সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে,যে সরকার নতুন স্বপ্ন দেখাবে। এখন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত,তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং নিহত সহযোদ্ধাদের রক্তের বদলা নিতে হলে আমাদের জেগে উঠতে হবে।দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো: এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে এবং মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারের পরিচালনায় গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান,বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু,হাবিবুর রহমান হাবিব, শাহজাহান মিয়া,আবদুল মান্নান তালুকদার,কর্নেল এম এ লতিফ খান,সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু,শাহিন শওকত,ওবায়দুর রহমান চন্দন,আমিরুল ইসলাম খান আলিম,মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল,নাদিম মোস্তফা,অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন,আবু সাঈদ চাঁদ,তোফাজ্জল হোসেন তপু, আবু বকর সিদ্দিক,ফজলুর রহমান খোকন,যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু,আতিকুর রহমান রুমন,ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল,তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক,শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন,কাজী মো:আমীর খসরু,মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, নওগাঁ জেলার আবু বকর সিদ্দিক নান্নু প্রমুখ।মির্জা ফখরুল বলেন,আমাদের চলমান লড়াই-সংগ্রামে ছয় শতাধিক নেতা-কর্মী গুম হয়েছে।পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯জনকে মত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে।এত দিন পরে সাজা দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায় সরকার।কিন্তু বিরোধী দল আরও নতুনভাবে উদ্যমী হয়েছে।তিনি বলেন,আওয়ামী লীগ আর রাজনৈতিক দল নেই,এখন এটি লুটেরাদের দলে পরিণত হয়েছে।নিজেরা লুট করে অর্থ-সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে। আর সাধারণ মানুষকে গরিব করছে।কদিন আগেই পাবনার কয়েকজন কৃষককে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।অথচ ক্ষমতাসীনরা ব্যাংক লুট করে দিচ্ছে, খাজাঞ্চিখানা শূন্য করে দিচ্ছে-কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।তিনি বলেন,আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে।তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩দিন হরতাল করেছিল।গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে মানুষ মেরেছে।পাঁচবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে সমস্যা হয়নি।কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই ব্যবস্থা বাতিল করেছে।ঢাকায় গণসমাবেশ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন,সরকার ঢাকার সমাবেশ নিয়ে ভয় পেয়েছে। আমরা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই।তারা তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম করে ফেলেছে।তারা আতঙ্কে ভুগছে।আমরা তো নয়াপল্টনে অসংখ্য সমাবেশ করেছি, যেখানে বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন।কই,তখন তো কোনো সমস্যা হয়নি!এখন তারা জঙ্গি নাটক শুরু করেছে।বিএনপিকে জেলে ভরতে তারা জঙ্গি বানায়। নিজেরাই বাস পুড়িয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করে।এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন,পুলিশ,আপনারা কি এই দেশের সন্তান নন?জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বাড়ি-গাড়ি বানান। কেন নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন করেন?খবরদার, আর নিপীড়ন করবেন না।আপনারা হলেন জনগণের সেবক।যেখানে আপনাদের উচিত ছিল নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা করা,সেখানে আপনারা পানি,বিদ্যুৎ ও খাবার বন্ধ করেছেন।কেন আপনারা এতটা অমানুষ,এত অমানবিক!এভাবে আপনারা সমস্ত মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন।আপনারা বিধান মেনে চলুন।অন্যথায় দেশের মানুষ কিন্তু কোনো অন্যায় সহ্য করবে না।

তিনি বলেন,আজকে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ক্ষমতাসীনরা দেশের সবকিছু লুটে নিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। ডলারের দাম এখন আকাশচুম্বী।কারণ সবই তো কানাডা আর মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে।১১বছরে ১৯লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে।আর বলে মেগা উন্নয়ন করেছে।অথচ কৃষক সার পায় না।ফসলের দাম পায় না। ঘরে ঘরে চাকরি নেই।১০টাকায় চাল নেই।কারণ সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

ফখরুল বলেন,আজকে ধানের শীষে রক্ত মিশেছে।এই রক্ত দূর করে ধানের শীষ পরিষ্কার করতে হবে।আমাদের আন্দোলন বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। আমাদের আন্দোলন জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন।একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আন্দোলন।আমরা আর কষ্ট করব না।এই ভয়াবহ দানব সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ঠিক থাকবে না।১৪বছর ধরে আমরা নির্যাতিত।ছোট বাচ্চাগুলো তাদের বাবা ও স্বজনদের জন্য অপেক্ষায় থাকে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন,এই সরকার তো আগের রাতেই ভোটডাকাতি করে ক্ষমতায় আছে।বিদেশিরাও বলছে তারা ভোটচোর।আসলে তাদের কোনো লজ্জা নেই।তিনি বলেন,গত ২বছরে ১২ হাজার নতুন কোটিপতি বেড়েছে।অন্যদিকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ আরও গরিব হয়েছে।তাহলে সরকার কার উন্নয়ন করেছে?আজকে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ শান্তিতে নেই,যারা হালাল উপার্জন করে।যারা ঘুষ খায়, অবৈধ উপার্জন করে,তারা কেবল সুখে আছে।এই সরকারকে বদলাতে হবে।সেলিমা রহমান বলেন, রাজশাহীর সমাবেশ থেকে প্রমাণিত হয় যে,শেখ হাসিনার সরকারকে দেশের জনগণ আর চায় না।তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।আজকে জনগণ সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়েছে।সরকার এখন আতঙ্কিত।ইনশা আল্লাহ ১০ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।এরপর জনগণই আপনাদের বিরুদ্ধে খেলবে। সুতরাং ওবায়দুল কাদেরকে বলব-খেলা বন্ধ করুন।আজকে দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই।জনগণের টাকা লুটে বিদেশে পাচার করে আরাম-আয়েশ করছেন।অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ হাহাকার করছে। আপনারা দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছেন।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন,পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিলাম আজকের বাংলাদেশের জন্য নয়।আজকে একটি সমাবেশ করতে হলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় এবং জনগণ তিন দিন আগেই এসে তাঁবুতে আশ্রয় নেয়।এটা কি সেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ?আজকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করতে হচ্ছে।আমরা মানুষের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করব।রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের যদি আওয়ামী লীগ করার ইচ্ছা হয় তাহলে পোশাক ছেড়ে রাস্তায় এসে বিএনপির সঙ্গে লড়েন।দেখা যাবে কে জেতে।জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের পরিবার চলে।সুতরাং আমাদের রক্তচক্ষু দেখালে ভয় পাই না। সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, সমাবেশ ঠেকাতে সরকার গায়েবি মামলা দিয়েছে, পরিবহন ধর্মঘট করেছে।ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।তবু আমাদের সমাবেশ মহাসমাবেশে রূপ ধারণ করেছে।তিনি এ সময় নেতা-কর্মীদের বলেন,আপনারা সরকারকে হলুদ কার্ড দেখান।পরে নেতা-কর্মীরা হলুদ ক্যাপ উঁচু করে ধরেন।যারা পরিশ্রম ও কষ্ট করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানান দুলু।নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল নিজ এলাকার তিন হাজারের বেশি নেতা-কর্মী নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।তিনি বলেন,বুধবারই ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নেন তারা।সেখানে নেতা-কর্মীদের খাওয়ার জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম ও উপকরণের ব্যবস্থা করেন।গতকাল তিনি একটি গরু জবাই করে মাংস ও খিচুড়ি রান্না করে নেতা-কর্মীদের খাইয়েছেন।তিনি বলেন,পুলিশ ও প্রশাসন বাধা দেবে,পরিবহন ধর্মঘট হবে,এগুলো মাথায় রেখে তারা আগেই সমাবেশে এসেছেন।ট্রেনে আসার সময় সান্তাহার রেলস্টেশনে পুলিশ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করে।কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় পুলিশ পিছু হটে বলে তিনি জানান।বিকালে তারেকের চেয়ার হাওয়া,সকাল থেকে সভামঞ্চে দুটি চেয়ার খালি রাখা হয়।সেই খালি চেয়ারের একটিতে বেগম খালেদা জিয়া ও একটিতে তারেক রহমানের ছবি রাখা হয়।বিকালে যখন সভামঞ্চে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর,তখন সরিয়ে দেওয়া হয় তারেক রহমানের জন্য রাখা চেয়ার ও ছবি।