অনলাইন ডেস্ক:- দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পসহ পুরো বেসরকারি খাতে বহুমুখী সংকটে অসহায় হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।সূত্র বলছে,ডলার সংকটে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না তারা।ফলে শিল্পকারখানায় মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল সংকট দেখা দিয়েছে।আবার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে শিল্পকারখানায় উৎপাদন অনেকাংশে কমে গেছে।ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এতে ব্যবসায়ীদের ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের(এফবিসিসিআই)সভাপতি মো:জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,ব্যাংক ঋণের সুদহার কোনোভাবেই বাড়ানো যাবে না।সুদহার বাড়ালে ঋণগ্রাহক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা আরও বেশি চাপে পড়বেন।রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে এরই মধ্যে কাঁচামাল,জাহাজ ভাড়া ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে।এমন পরিস্থিতিতে সুদহার বাড়লে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় ও ব্যবসার খরচ বাড়বে। কভিডের সংকট পার করে এখনো বাড়তি চাপ সামলানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাই সুদহার বাড়ালে নতুন খেলাপি তৈরির ঝুঁকি তৈরি হবে।এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন,গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ কমে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবেন,যা ব্যাংক ও উদ্যোক্তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের বৈশ্বিক সংকটের সমাধান হিসেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে।পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে জ্বালানি খরচ কমানো সম্ভব।ডলার সংকট সমাধানে ব্যাংকিং সেবাকে আরও কার্যকর করাসহ খরচ কমানো প্রয়োজন।শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের(বিসিআই)সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজের মতে,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান দুই বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক বেড়েছে। তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে।তাদের এখন খাদ্যের পেছনেই অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে।সে কারণে আমাদের রপ্তানি আয় কমছে।এ অবস্থায় আগামী দিন আমাদের রপ্তানি আয়ে খুব ভালো খবর নেই।তবে বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে আমাদের রিজার্ভ কিন্তু দিন দিন কমে আসছে।এখন ৩৫বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এক বছর আগে ছিল ৪৮বিলিয়ন ডলার।রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স-এ দুই সূচক এতদিন অর্থনীতিকে সামাল দিয়ে আসছিল।সেই দুই সূচকই কিন্তু ধাক্কা খেয়েছে।রপ্তানির চেয়ে রেমিট্যান্সে বেশি ধাক্কা লেগেছে।সে কারণেই কিন্তু রিজার্ভ কমছে।চলমান সংকট নিয়ে আলাপকালে একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে।বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন ও আমদানি করতে না পারায় স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য।ব্যবসায়ীরা ঋণখেলাপিতে পরিণত হচ্ছেন।ভয়াবহ জ্বালানি সংকটে সারা দেশের শিল্প খাত।এ সংকটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিল্পের উৎপাদন খরচ।এমন তথ্য দিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন,চাহিদা অনুসারে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না।কারখানাগুলোয় বিদ্যুৎ নেই।ফলে উৎপাদন ২৫ থেকে ৪০শতাংশ বন্ধ।কঠিন সময় অতিক্রম করছে শিল্প খাত।শিল্পোৎপাদন অব্যাহত রাখতে এখনই প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা দিতে হবে।দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহার,অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ও সাধারণ পণ্য আমদানি- এ তিন খাতে ডলারের সুষম বণ্টন ডলার সংকট সমাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।ডলার সংকটে সাধারণ ব্যবসায়ীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।খাতভিত্তিক ডলারের মূল্য নির্ধারণ ও সংকটে দায়ী ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত অবস্থান নিতে হবে। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মতে,জ্বালানি সংকটের সমাধান না হলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে তাদের ওপর চাপ বাড়বে। অনেকে ঋণখেলাপি হয়ে পড়বেন।উৎপাদন বন্ধ থাকায় তা কর্মসংস্থানের ওপরও প্রভাব ফেলবে।দেশি ও আন্তর্জাতিক কারণে উদ্যোক্তাদের এখন গলদঘর্ম অবস্থা।বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।অনেকে মূল্যবান জ্বালানি দিয়ে জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন ঠিক রাখার চেষ্টা করছেন।কিন্তু এর ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে।আবার বাংলাদেশ যেসব দেশে পণ্য রপ্তানি করে সেসব দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি আদেশ কমছে।অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা কৃচ্ছ্রসাধন করছেন।এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো সংকটের মধ্যে পড়েছে। এফবিসিসিআইর তথ্য বলছে,জ্বালানি নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।বিশেষ করে ডিজিটাল যুগে দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে শিল্প,বাণিজ্য,উৎপাদন এবং আর্থিক কার্যক্রম,যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিদ্যুৎনির্ভর।আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম উপাদান জ্বালানি তেল ও গ্যাস।বর্তমানে বছরে মোট ৯৯৪দশমিক ৪বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে,যার ৪৬শতাংশ ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে,১৫শতাংশ ক্যাপটিভ পাওয়ার শিল্পে,১৩শতাংশ গৃহস্থালিতে,৫শতাংশ সার কারখানায়,৪শতাংশ সিএনজিতে,১শতাংশ বাণিজ্যিক এবং দশমিক১০শতাংশ ব্যবহৃত হয় চা-বাগানে। এফবিসিসিআই বলছে,লোডশেডিং করার ক্ষেত্রে শিল্প, কৃষি ও অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।অন্যথায় উৎপাদন বিঘিœত হলে যেমন সাপ্লাই চেইনে ব্যাঘাত ঘটবে,তেমনি রপ্তানিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমান সংকটময় সময়ে রপ্তানি বাজার ধরে রাখতে উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম কোনোভাবেই ব্যাহত করা যাবে না।আবার অতিমাত্রায় শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হলে উৎপাদন ব্যাহত হবে।এটি মূল্যস্ফীতিকেও বাড়িয়ে দিতে পারে।
★প্রকাশক:- মোঃ মোশারফ হোসেন তোকদার।
★ব্যবস্থাপনা পরিচালক:- মোঃ এম,খোরশেদ আলম,সভাপতি প্রেসক্লাব পীরগাছা,রংপুর বিভাগ।
© All rights Reserved © 2020 গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত এই ওয়েবসাইটি Tokdernews.com বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পোর্টাল।