প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ১, ২০২৪, ২:৩৮ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ২২, ২০২২, ৩:০০ এ.এম
এবার বিআরডিবি প্রশিক্ষণের নামে ১৮১ কোটি টাকা নয়ছয় ভুয়া বিল-ভাউচার করেছেন
অনলাইন ডেস্ক:-২০২০সালের ৫এপ্রিল বিকাল ৩টা। রাজধানীর বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি)সম্মেলনকক্ষ।বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার রূপকার শীর্ষক এক দিনের কর্মশালায় সভাপতিত্ব করছিলেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক(ডিজি) সুপ্রিয় কুমার কুন্ডু।এতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (পরিকল্পনা)এস এম মাসুদুর রহমান,পরিচালক (সরেজমিন)আবদুর রশীদ,পরিচালক(প্রশিক্ষণ) ইসমাইল হোসেনসহ বিভিন্ন পদের আরও ৩৮জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।কর্মশালা বিকাল ৩টার পর শুরু হলেও তাদের দুপুরের খাবার বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৩৩হাজার ৩৪৫টাকা।যা কেনা হয়েছিল কারওয়ান বাজারের চারুলতা রেস্তোরাঁ থেকে।বাস্তবে সেদিন ওই দোকানসহ রাজধানীর সব দোকানই বন্ধ ছিল।এমনকি বন্ধ ছিল বিআরডিবির প্রধান কার্যালয়ও।হয়নি কোনো কর্মশালাও।কারণ করোনা মহামারির কারণে ২০২০সালের ২৭মার্চ থেকে ৩০জুন পর্যন্ত দেশে ছিল কঠোর লকডাউন (সাধারণ ছুটি)।উপযুক্ত কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ায় ছিল কঠোর নিষেধাজ্ঞা।স্বাস্থ্যকর্মী,মেডিকেল প্রতিষ্ঠান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া সরকারি,আধা-সরকারি,স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ জল,স্থল ও আকাশপথের যান চলাচলও বন্ধ করে দেয় সরকার।অথচ এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি ছুটির মধ্যেও ৫এপ্রিলের মতো অফিসে বসে আরও এমন ভুয়া সভা,সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ করেছেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের(বিআরডিবি)কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যা বাস্তবে নয় কাগজে-কলমে।উল্লিখিত তিন মাসে এমন অনুষ্ঠানের নামে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ৩৬লাখ ৬৪হাজার ৮৩০টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষণের নামে খরচ দেখানো হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ের ঋণের কিস্তি ও সঞ্চয়ের ১৪কোটি ২৭লাখ টাকা উত্তোলন করে তহবিলে জমা না দিয়ে পকেটে ভরেছে প্রতিষ্ঠানটির একটি অসাধু চক্র।এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ খেলাপি ঋণ আদায় না করা ১৫৯ কোটি টাকাসহ প্রতিষ্ঠানটির কমবেশি ১৮১কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিআরডিবির ওই সময়ের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এ লুটপাট হয়েছে।এর সত্যতা মিলেছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ২০১৮-১৯থেকে ২০২০-২১অর্থবছরের অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্টে(এআইআর)।স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন অডিট অধিদফতরের ডিসিজিএস (অডিট)আয়েশা সিদ্দিকার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি নিরীক্ষা দল চলতি বছরের ২৯মার্চ থেকে ২ জুন পর্যন্ত বিআরডিবির সদর দফতর,চারটি প্রকল্প ও মাঠপর্যায়ের তিনটি জেলা অফিস সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরি করেন।সম্প্রতি প্রতিবেদনটি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।এতে প্রতিষ্ঠানটির ২১টি খাতের আয়-ব্যয়,তহবিল ও বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে ১৪ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি চিহ্নিত করেছে নিরীক্ষা দলটি।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-হিসাবের বার্ষিক বিবরণী যথাযথভাবে প্রস্তুত না করা,ব্যাংক সুদ সরকারি কোষাগারে জমা না করা,সমিতির কিস্তি ও সঞ্চয়ের আদায় করা অর্থ আত্মসাৎ এবং মূল হিসাব থেকে অন্য হিসাবে অনিয়মিতভাবে অর্থ স্থানান্তর করা।পাশাপাশি আয়কর ও ভ্যাট আদায় করে সরকারি কোষাগারে না দেওয়া,সভা-সেমিনার ও প্রশিক্ষণের নামে অর্থ ব্যয় করা।অব্যয়িত অর্থ অর্থবছর শেষে সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া।এ ছাড়া আউটসোর্সিং জনবলকেও উৎসব ও নববর্ষভাতা দেওয়া,পিপিআরের বিধি লঙ্ঘন করে নগদ ক্রয় পদ্ধতিতে সিলিং সীমার বেশি ক্রয়,আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ-২০১৫উপেক্ষা করে গাড়ি মেরামত ও মেয়াদোত্তীর্ণ খেলাপি ঋণ আদায় না করা।দেশে প্রথম ২০২০সালের ৮মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হলে ২৬মার্চ থেকে ৪এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে এবং টানা ৬৬ দিনের ছুটিতে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল দেশ।সেই সময় ভুয়া সভা,সেমিনার,প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ দেখিয়ে লাখো-কোটি টাকা লুটপাট করেছেন বিআরডিবির অসাধু কর্মকর্তারা।দেশে কঠোর লকডাউনে অফিস-আদালত ও দোকানপাট বন্ধ থাকলেও ৩ মে সকালে ৬০টি নাশতা বাবদ ৯ হাজার ৮৫৫ টাকা এবং ৫৫টি সান্ধ্যকালীন নাশতা বাবদ ৩০হাজার ১১৩টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।একইভাবে এর দুই দিন পর ৫মে সকাল ও সন্ধ্যার নাশতা বাবদ ৪২হাজার টাকা এবং ১৭মে একইভাবে সমপরিমাণ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।এ ছাড়া ২০আগস্ট বিআরডিবি কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় খরচ দেখানো হয় ৬লাখ ৪৪হাজার ৭৬৬টাকা।এ অনুষ্ঠানে চারটি কলম,প্যাড ও ফোল্ডারের দাম ধরা হয় ২১ হাজার ৯৯৬টাকা।একটি কলম ১হাজার টাকা,প্যাড ২০০টাকা এবং ফোল্ডার সাড়ে ৩০০টাকা।সেই হিসাবে মোট টাকার পরিমাণ ৬হাজার ২০০হলেও ভাউচারে ১৮হাজার ৮০০টাকার সঙ্গে ভ্যাট ও আইটি ৩হাজার ১৯৬টাকাসহ মোট ২২হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।সে হিসাবে একটি কলম,প্যাড ও ফোল্ডারের দাম হয় ৫হাজার ৪৯৯টাকা।এভাবেই লুটপাট করা হয়েছে সরকারি কোষাগারের কোটি কোটি টাকা।
যা বললেন সাবেক ডিজি :-এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআরডিবির সাবেক ডিজি ও অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত সচিব সুপ্রিয় কুমার কুন্ডু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,কঠোর লকডাউনের মধ্যে বিআরডিবিকে চাঙ্গা রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কিছু কাজ করতে হয়েছে।বিআরডিবি গ্রামের প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে কাজ করে। লকডাউনের কারণে প্রান্তিক মানুষদের বাঁচাতে ও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রণোদনা তাদের পৌঁছে দিতে লকডাউনের মধ্যেই অফিস খোলা রাখতে হয়েছে। কিছু কিছু প্রশিক্ষণ,কর্মশালা ও সেমিনার করা হয়েছে।অডিট অধিদফতরের উত্থাপন করা ১৮১ কোটি টাকার আপত্তি ও এতে প্রান্তিক মানুষ সম্পৃক্ততা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিয় কুমার কুন্ডু বলেন,আসলে ফাইল না দেখে কিছু বলতে পারব না।তাছাড়া টেলিফোনে এত কথা বলতে পারব না’বলেই মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
অফিস কার্যালয়ঃ- মেসার্স তোকদার বস্ত্রালয়--প্রেসক্লাব পীরগাছা,উপজেলা:-পীরগাছা,জেলা:-রংপুর। মোবাইল:০১৭১-০৮৭০৪২০,০১৭২-৭০২০০৩৫ ই-মেইল :tokdernews@gmail.com