গাইবান্ধা-৫আসনের উপনির্বাচন এবং নেত্রকোনায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির(জাপা)প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন,তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিলেন দলের চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের।তিনি বলেছেন,জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা হামলা ও মিথ্যা মামলার কারণে ঘরে থাকতে পারছেন না।আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাপার চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জি এম কাদের বলেন,কাল গাইবান্ধা-৫আসনের উপনির্বাচন।অথচ সেখানে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা হামলা ও মিথ্যা মামলার কারণে ঘরে থাকতে পারছেন না।সরকার-সমর্থকেরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।গাইবান্ধায় হাজার হাজার বহিরাগত সন্ত্রাসী ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে।আবার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা,পোলিং কর্মকর্তারা সরকারি দলের আনুকূল্য পেতে ব্যস্ত হয়ে আছেন।জি এম কাদের বলেন,জেলা পরিষদ নির্বাচন চলছে।নেত্রকোনায় জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও জাতীয় পার্টি নেতা আসমা আশরাফের ওপর সরকার-সমর্থকেরা সন্ত্রাসী হামলা করেছে।তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।পিরোজপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে মাঠে থাকতে সহায়তা করায় তুশখালী ইউনিয়ন জাপার সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলামের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।মামলায় হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে তাঁকে কুপিয়ে একটি পা বিচ্ছিন্ন করেছে সরকার-সমর্থকেরা।তিনি এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।হতাশা প্রকাশ করে জাপার চেয়ারম্যান বলেন,আসলে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।দেশের মানুষ এখন আর নির্বাচনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।যাঁরা ভোট করতে চান, তাঁরাও জানেন নির্বাচন করতে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয় না।নির্বাচন করতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয়।এ কারণে সাধারণ মানুষও ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।জি,এম,কাদের বলেন,এভাবে চলতে থাকলে দেশে আর রাজনীতি,রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল থাকবে না।টবে সাজানো ফুলের বাগানের মতো কিছু দল থাকবে।যেমন টবের ফুলে সৌরভ থাকে কিন্তু মাটির সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না।ঠিক তেমনি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে না-এমন দুর্বল কিছু রাজনৈতিক দল থাকবে।এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।দেশ দেউলিয়াত্বের দিকে যাচ্ছে মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন,৪থেকে ১০ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ অসহনীয় কষ্ট ভোগ করছে।১৪হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্থলে ২০হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি আছে।কিন্তু টাকার অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না সরকার।বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমেছে,কিন্তু টাকার অভাবে তা-ও কিনতে পারছে না সরকার।সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল,সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে।এখন তারা বলছে নভেম্বরে হবে।কেউ জানে না কখন থেকে বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে।তাই দেশের মানুষ সরকারের কথায় আস্থা রাখতে পারছে না।এ প্রসঙ্গে জি এম কাদের আরও বলেন,শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হওয়ার আগে সে দেশে লোডশেডিং ছিল।ডলারের দাম বেড়েছিল, জ্বালানি তেল কিনতে পারেনি,আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছিল অস্বাভাবিক হারে।ঠিক একই চিত্র বাংলাদেশে।এখানেও ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমছে,ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না সরকার।বিদ্যুতের অভাবে শিল্প-কলকারখানা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না,উৎপাদন কমে যাচ্ছে।এতে কাজ হারিয়ে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন।টাকার দাম কমে যাওয়ার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।আবার শ্রীলঙ্কার মতোই মেগা প্রকল্পে লাখ-কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে।একই সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।তিনি বলেন,সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে।১০টাকা দামে চাল খাওয়াবে ঘোষণা দিয়েছিল।এখন চালের কেজি ৭০টাকা।এমন দুঃসহ অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়।এর আগে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের(বিএইচআরসি)নির্বাহী সম্পাদক ও ব্যবসায়ী মির্জা শাহাদাৎ হোসেন এবং বিএইচআরসির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া মোল্লা জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।তাঁদের স্বাগত জানান জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের।এ সময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।