এক জরিপে এ তথ্য তুলে ধরেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।সংগঠনটি জানায়,ধর্ষণের বিচার ১৮০দিনের মধ্যে শেষ করার বিধি থাকলেও কার্যকর হয় না।
শুক্রবার(৩০সেপ্টেম্বর)জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২২উপস্থাপনকালে ফোরামের পক্ষ থেকে এসব জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়,নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০এর ধারা ২০(৩)-এ বলা হয়েছে,বিচারের জন্য ধর্ষণ মামলা প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৮০দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালকে কাজ শেষ করতে হবে।তবে,আইনে থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন,চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ৭৬জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।এদের মধ্যে একজন বিশেষ শিশুও ছিল।অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে তিনজন।অপহরণ ও পাচার হয়েছে ১৩৬জন।এছাড়াও ২৮জেলায় গত আট মাসে দুই হাজার ৩০১জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন,একই সময়ে যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয়েছে ১৩জন,তাদের ৫জন যৌতুক দিতে ব্যর্থ হওয়ায় হত্যার শিকার হয়েছে।আলোচ্য সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭৪ জন।
নাছিমা আক্তার জলি আরও জানান,গত ৮মাসে আত্মহত্যা করেছে ১৮১কন্যাশিশু।এ সময়ে ১৮৬ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি ড:বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আর এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এগিয়ে যাওয়ার এ সময়টিতে এসেও কন্যাশিশুর জন্মকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না।ছেলেসন্তান জন্ম দেওয়াকে সামাজিকভাবে গৌরবের বিষয় ভাবা হয়।এটি কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণই শুধু নয়,তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণও বটে।
তিনি বলেন,কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংস আচরণ শুরু হয় একেবারে জন্মলগ্ন থেকে।কিছু ক্ষেত্রে ভ্রুণ অবস্থা থেকেই।কন্যাশিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ ও বঞ্চনা প্রতিরোধে কর্মকৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কন্যাশিশুদের সার্বিক চিত্র জানা প্রয়োজন।এ বিষয়ে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে।
অনুষ্ঠানে কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
১.শিশু নির্যাতন,ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
২.যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’নামে একটি আইন জরুরিভিত্তিতে প্রণয়ন করতে হবে।
৩.ঘটনার শিকার কন্যাশিশু ও নারীর পরিবর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে ও আইনের আওতায় আনতে হবে।এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করতে হবে।
৪.উচ্চপর্যায়ের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় সব ধরনের পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধসহ পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।
৫.কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৬.শিশু সুরক্ষায় শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন করতে হবে।
৭.বাল্যবিয়ে বন্ধের লক্ষ্যে সামাজিক সুরক্ষার বাজেট বাড়িয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কন্যাশিশু ও তাদের অভিভাবকদের এর আওতায় আনতে হবে।বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।
৮.সাইবার সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা,জাতীয় বাজেটে সাইবার সচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়া,বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআরে সাইবার সচেতনতা বাধ্যতামূলক করা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
৯.নির্যাতন বন্ধে বিদ্যমান আইনসমূহের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০.কন্যাশিশুর প্রতি সমাজের মনোভাব বদলাতে নারী-পুরুষ, সরকার,প্রশাসন,নাগরিক সমাজ,মিডিয়া এবং পরিবার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন-চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রোটেকশন এডুকোর স্পেশালিস্ট মো:শহীদুল ইসলাম, গুডনেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইনুদ্দিন মাইনুল,হেলেন মনিষা সরকার প্রমুখ।
★প্রকাশক:- মোঃ মোশারফ হোসেন তোকদার।
★ব্যবস্থাপনা পরিচালক:- মোঃ এম,খোরশেদ আলম,সভাপতি প্রেসক্লাব পীরগাছা,রংপুর বিভাগ।
© All rights Reserved © 2020 গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত এই ওয়েবসাইটি Tokdernews.com বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পোর্টাল।