গুলশান থানার অস্ত্র আইনের মামলায় কথিত যুবলীগ নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং তার সাত দেহরক্ষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।রায় ঘোষণার পর তাকে আদালত থেকে বের করা হয়। এসময় তিনি বলেন,আমাকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি নির্দোষ।আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।রোববার(২৫ সেপ্টেম্বর)ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি সব আসামির লাইসেন্স করা অস্ত্র রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন-মো: জাহিদুল ইসালাম,মো:শহিদুল ইসলাম,মো:কামাল হোসেন,মো:সামসাদ হোসেন,মো:আমিনুল ইসলাম,মো: দেলোয়ার হোসেন ও মো:মুরাদ হোসেন।তারা সবাই জি কে শামীমের দেহরক্ষী।এদিকে রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহউদ্দিন হাওলাদার বলেন,রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।তাই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন আদালত।তবে জি কে শামীমের আইনজীবী শাহিনুর রহমান বলেন,রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নয়।এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবো।গত ২৮ আগস্ট মামলাটির যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম রায় ঘোষণার ২৫ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেন।২০১৯ সালের ২০সেপ্টেম্বর গুলশানের নিজ কার্যালয়ে সাত দেহরক্ষীসহ গ্রেফতার হন জি কে শামীম।পরে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র,মাদক ও অর্থপাচার আইনে তিনটি মামলা হয়।মামলার এজাহারে শামীমকে চাঁদাবাজ,টেন্ডারবাজ,অবৈধ মাদক ও জুয়ার ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করা হয়।একই বছরের ২৭ অক্টোবর আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১ এর উপ-পরিদর্শক শেখর চন্দ্র মল্লিক অস্ত্র মামলায় চার্জশিট জমা দেন।২০২০সালের ২৮জানুয়ারি একই আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।এ মামলায় ১০ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি আমিনুল ইসলাম জামালপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছে মর্মে ডকুমেন্ট দেখালেও তা যাচাইয়ে তার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে ওই অস্ত্রের নকল কাগজপত্র নিয়ে ২০১৭সালে প্রথমে এসএম বিল্ডার্স কোম্পানিতে যোগদান করেন। ২০১৯সালের মাঝামাঝি আসামি জি কে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে যোগদান করে কাজ করে আসছিলেন। তিনি মূলত অবৈধ অস্ত্রটি ৭০হাজার টাকায় ক্রয় করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করেন।
এছাড়া অন্য আসামিরা নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও তারা শর্ত ভঙ্গ করে অস্ত্র প্রকাশ্যে বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করতেন।এর মাধ্যমে টেন্ডারবাজি,চাঁদাবাজি,মাদক ও জুয়ার ব্যবসা করে স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন।২০১৯সালের ২০সেপ্টেম্বর সাত সশস্ত্র দেহরক্ষীসহ জি কে শামীমকে তার কার্যালয় থেকে আটক করে র্যাব।নিকেতন এ-ব্লকের ৫নম্বর রোডের ১৪৪ নম্বর বাড়িতে তার অফিসে র্যাব দীর্ঘ ১১ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।সে সময় তার কার্যালয় থেকে এক কোটি ৮০লাখ টাকা,৯হাজার মার্কিন ডলার,৭৫২ সিঙ্গাপুরের ডলার,১৬৫কোটি টাকার এফডিআর,অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।এরপর জি কে শামীমের বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করে। মামলাগুলো হলো-অস্ত্র আইনে মামলা নম্বর ২৮(০৯)১৯,মানি লন্ডারিং মামলা নম্বর ২৯(৯)১৯এবং মাদক মামলা নম্বর ৩০(৯)১৯।এরপর তার বিরুদ্ধে দুদক আরও একটি মামলা দায়ের করে।মামলাগুলো বিচারাধীন।