ঢাকার চারপাশ ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা শীতলক্ষ্যা,বালু ও তুরাগ নদের দখল ও দূষণ কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না।প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা,হাই কোর্টের রায় ও দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযানের পরও নদীতীর ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ থামেনি।উদ্ধারকৃত নদীর জমিতে ফের গড়ে উঠেছে বালুর গদি,ট্রাকস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা।অনেক জায়গার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদই হয়নি।কচ্ছপ গতিতে চলছে চার নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ।বহুবার উদ্যোগের পরও স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত বিষাক্ত রঙিন পানি নদীতে পড়া বন্ধ হয়নি।নদীপাড়ের বাসিন্দাদের গৃহস্থালি ও মানববর্জ্য আগের মতোই পড়ছে নদীতে।ফলে বর্ষায় যখন নদীগুলোর পানি সবচেয়ে স্বচ্ছ থাকে,তখনো নাকে রুমাল চেপে পার হতে হচ্ছে তুরাগ,বুড়িগঙ্গা ও বালু নদী।শীতলক্ষ্যার পানি তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার থাকলেও দূষণ বাড়ছে।গত তিন দিনে সরেজমিন চার নদীর বিভিন্ন স্পটে এমন চিত্রই দেখা গেছে।২০১৯সালের ২৯জানুয়ারি ঢাকার আশপাশের নদ-নদী দখলমুক্ত করতে জোরেসোরে অভিযানে নামে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউটিএ)।২০২০সালে এবং ২০২১সালে করোনার মধ্যেও চলে অভিযান।প্রায় ৭হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে উদ্ধার করা হয় নদীতীর।নদীগুলোর দূষণ ও তীরভূমি পুনর্দখল রোধে পরীক্ষামূলকভাবে রিভার গার্ড’ইউনিটও গঠন করে বিআইডব্লিউটিএ।তবে উদ্ধারকৃত নদীর জায়গার অনেক স্থান ফের বেদখল হয়ে গেছে।গাবতলী ব্রিজ থেকে সিন্নিরটেক পর্যন্ত পূর্ব পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও ভরাটকৃত মাটি রয়ে গেছে।সেখানেই ফের চলছে দখল।পালপাড়া ঘাটের পরে নদীর অংশে দেখা গেছে ট্রাকস্ট্যান্ড।দিয়াবাড়ি কাউন্দিয়া ঘাট সংলগ্ন এলাকায় দেখা গেছে আরেকটি বিশাল ট্রাকস্ট্যান্ড ও বালু-পাথরের গদি।দিয়াবাড়ি থেকে চটবাড়ি পর্যন্ত নতুন করে ১০-১২টি বালুর গদি চোখে পড়েছে।চটবাড়ি থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত নদীর পাড়ে দেখা গেছে অসংখ্য বাণিজ্যিক স্থাপনা।এসব স্থাপনায় যাওয়ার জন্য পাউবোর সরকারি জায়গার ওপর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সংযোগ সড়ক।আশুলিয়া থেকে ইজতেমা মাঠ পার হয়ে টঙ্গী খাল পর্যন্ত নদীর পাড় দখল করে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়,বাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।এসব স্থানে একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাবুবাজার ব্রিজের নিচেই রয়েছে বড় স্যুয়ারেজ লাইন।সেখান থেকে নদীতে পড়ছে বর্জ্যসহ রঙিন পানি।এক কিলোমিটারের মধ্যে আরও ১০-১২টি স্যুয়ারেজ লাইনের দেখা মিললেও নৌকার মাঝি সোনা বালি সরদার বলেন,বর্ষার কারণে অধিকাংশ স্যুয়ারেজ লাইন এখন পানির নিচে।তবে মাঠপর্যায়ের জরিপ,জিপিএস মানচিত্র ও স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে ২০১৯সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে বুড়িগঙ্গায় ২৩৭টি বর্জ্যরে ভাগাড় ও ২৫১টি স্যুয়ারেজ লাইন,তুরাগ নদে(টঙ্গী খালসহ)১৩১টি বর্জ্যরে ভাগাড় ও ৯৯টি স্যুয়ারেজ লাইন এবং বালু নদীতে ৩২টি বর্জ্যরে ভাগাড় ও ১০টি স্যুয়ারেজ লাইন পায় জরিপকারী সংস্থা রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্স সেন্টার(আরডিআরসি)।সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,গত কয়েক বছরে দখল-দূষণের বিরুদ্ধে অনেক অভিযান,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলেছে।তবে পরিস্থিতি মোটেও বদলায়নি।আমরা নিয়মিত নদীগুলো পর্যবেক্ষণ করছি।একটি স্যুয়ারেজ লাইনও বন্ধ হয়নি।সবগুলো থেকেই মানববর্জ্যসহ কল-কারখানার অপরিশোধিত রঙিন পানি বের হয়।তবে এখন বর্ষাকালে অধিকাংশ স্যুয়ারেজ লাইন পানির নিচে থাকায় বোঝা যায় না।বারবার বলার পরও নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের জন্য সিটি করপোরেশন কোনো ডাস্টবিন স্থাপন করেনি।সবাই নদীতেই আবর্জনা ফেলে।শিল্পবর্জ্য, স্যুয়ারেজ লাইনে ময়লা আগের চেয়ে বেড়েছে।এ ছাড়া যেসব স্থান থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছিল,সেখানকার ভরাটকৃত মাটি কেটে না নেওয়ায় অনেক স্থান ফের দখল হয়েছে।তিনি বলেন,নদী দখলের প্রথম পদক্ষেপটাই হলো বর্জ্য ফেলা।এরপর সেখানে ছোটখাটো দোকান ওঠে,পরে ভবন ও শিল্প-কারখানা।বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের টুওয়ার্ডস অ্যা মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর সাসটেইনেবল প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’শীর্ষক সমীক্ষায় দেখা গেছে,ঢাকার চার নদীতে দৈনিক ১১২টন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে,যার বড় একটি অংশ প্লাস্টিক ও পলিথিন।২০১৯সালের নভেম্বর থেকে ২০২০সালের নভেম্বর পর্যন্ত চলা ওই সমীক্ষায় বুড়িগঙ্গা নদীর ৪৩টি জায়গায় ১১হাজার ৫৬৪টন,শীতলক্ষ্যায় ৪৩জায়গায় ৪৩হাজার ১৮৩টন,বালু নদের সাত জায়গায় ২হাজার ১২টন এবং তুরাগের ৩৬জায়গায় ১৫হাজার ৭৭১টন বর্জ্য পাওয়া গেছে।দীর্ঘদিনের দখলে-দূষণে মৃতপ্রায় ঢাকার চার নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করে স্বচ্ছ পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নদীর দুই পাড় দৃষ্টিনন্দন করতে সরকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।প্রকল্পের আওতায় ১হাজার ২০০কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর দুই পাড়ে ১০০বছর মেয়াদি স্থায়ী সীমানা পিলার স্থাপন,ওয়াকওয়ে, আরসিসি সিঁড়ি,বসার বেঞ্চ,মালামাল উঠানামার জেটি,ইকোপার্ক,সীমানা প্রাচীর,পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা,সবুজ বেষ্টনীসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির প্রকল্প চলমান রয়েছে।২০১৮সালের জুলাই হতে ২০২২সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮সালে একনেকে অনুমোদিত হয় প্রকল্পটি।বন্যার কারণে পরবর্তীতে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়।বর্তমানে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি অর্ধেকও।এ ব্যাপারে চার নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক শাহনেওয়াজ কবীর মিঠু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,এখন পানি বেশি থাকায় ওপরে কাজ চলছে।শুষ্ক মৌসুমে জোরেসোরে কাজ শুরু হবে।অধিকাংশ উচ্ছেদ হয়ে গেছে।কিছু স্থানের বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা আছে।মামলার সুরাহা না হলে কাজ করতে পারছি না।আশুলিয়ার আশপাশে নদীর জায়গায় ট্রাকস্ট্যান্ড ও বালুর গদির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমরা উচ্ছেদ করেছিলাম,তারা আবার এসে বসেছে।ওখানে সীমানা পিলারও বালুতে ঢেকে গেছে।মূলত,জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো)বাধের জন্য অধিগ্রহণকৃত।অনেক বড় জায়গা।এ জন্য আমরা কিছু করতে গেলে দখলকারীরা বলছেন,তারা পাউবো থেকে লিজ নিয়েছেন।গত মাসে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আমরা বিষয়টি তুলেছিলাম।পাউবোর সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর যৌথ কমিটি করে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।সেটা হলে হয়তো ওই এলাকা দখলমুক্ত করতে পারব।
★প্রকাশক:- মোঃ মোশারফ হোসেন তোকদার।
★ব্যবস্থাপনা পরিচালক:- মোঃ এম,খোরশেদ আলম,সভাপতি প্রেসক্লাব পীরগাছা,রংপুর বিভাগ।
© All rights Reserved © 2020 গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত এই ওয়েবসাইটি Tokdernews.com বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পোর্টাল।