★ বিপুল ইসলাম আকাশ,সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ-
দরিদ্র পরিবারের জাহাঙ্গীর আলম।যখন টগবগে যুবক,তখন অভাব-অনটন তাকে কাবু করে ফেলে।জীবনে নেমে আসে কালমেঘ।নিজেকে আলোকিত করা দৃঢ় প্রত্যেয়ে বেঁছে নেয় আইস্ক্রিম বিক্রি পেশা।ঠেলা গাড়ির বাক্স ভর্তি আইস্ক্রিম নিয়ে ছুটে চলেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তরে।দীর্ঘদিনের এই পেশা অব্যাহত রেখে দরিদ্রতাকে বিদায় জানিয়েছেন।ফিরেছে সোনালী দিন।করেছেন বসবাস উপযোগী বাড়ি।কিনেছেন জায়গা জমি।গড়েছেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও।
এই অদম্য জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর গ্রামে।তিনি ওই গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছিলে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,অতিদরিদ্র পরিবারে জন্ম জাহাঙ্গীর আলমের।পিতার সংসারের অভাব-অনটন যেন নিত্যসঙ্গী।এ সংসারে থাকাবস্থায় প্রায় দুই যুগ আগে মারা যায় পিতা মকবুল হোসেন।এমতাবস্থায় ছোট-ভাই বোন ও মাকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে।এরই মধ্যে বিয়েও করেন। কিন্তু তেমন সহায়-সম্পদ না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করতে হয়। সামাজিকভাবে বেঁচে থাকায় দায় হয়ে দাঁড়ায়।যেন নুন আন্তে পান্তা ফুরায় তার। পরিবারটি নিভু নিভু অবস্থা শুরু হয়।কিছুতে পিছু ছাড়ছিলো না অভাব-অনটন।সংগ্রামী এই জীবনজীবিকার তাগিদে জাহাঙ্গীর আলম খুঁজে নেয় আইস্ক্রিম বিক্রির পেশা। স্থানীয় একটি এনজিওর ঋণের ৪হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়ে গ্রাম-গঞ্জ ও শহর এলাকায় গিয়ে আইস্ক্রিম বিক্রি করে।ঠেলা গাড়ির বাক্সে আইস্ক্রিম ভর্তি করে নিয়ে ছুটে চলেন নানাদিক।এভাবে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধীরে ধীরে এ ব্যবসায় স্বাবলম্বী হয়েছেন।বর্তমানে বসবাসের জন্য নির্মাণ করেছেন বাড়ি।ফসল উৎপাদনে কিনেছেন জমাজমি।
শুধু তাই নয়,এই জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন ধরণের সমাজসেবার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি ধর্মীয় শিক্ষালয়। এর নাম দেওয়া হয় দারুল কুরআন ক্বওমী মাদরাসা-এতিমখানা ও লিল্লা বোর্ডিং।এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী অধ্যায়ন রয়েছে।স্থানীয় ব্যক্তি ও জাহাঙ্গীরের নিজ অর্থায়নে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া ও পাঠাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।এখান থেকে এতিম ও দরিদ্র শিক্ষার্থীর পাঠগ্রহণ শেষে আলোকিত জীবন গড়ছে। এছাড়া জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মারুফ মিয়াকে হাফেজ তৈরী করেছেন।একই সঙ্গে মেয়ে রুমি আক্তার রংপুরের সনামধন্য প্রতিষ্ঠান বারো আওলিয়া ক্বওমী মাদরাসায় অধ্যায়ন আছে।
উত্তর তারাপুর দারুল কুরআন ক্বওমী মাদরাসা-এতিমখানা ও লিল্লা বোর্ডিং এর প্রধান শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল জানান,তার বাড়ি লালমনিরহাট জেলায়।এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে নিজেও স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও ধর্মীও জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন,জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন আইস্ক্রিম বিক্রেতা এই মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন।তার সর্বাত্নক চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষাক্রম।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন,এক সময়ে আমার নানা অভাব-অনটনে সংসার চলছিলো।স্বল্প পুঁজিতে ভ্রাম্যমানভাবে আইস্ক্রিম বিক্রি করে সংসারে বেশ স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এর পাশাপাশি মাদরাসাটি পরিচালনা করে আসছি।
সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি)চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লেবু এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন,জাহাঙ্গীর আলম একজন ভালো মনের মানুষ। এখনো গ্রাম-শহরে আইস্ক্রিম বিক্রি করে সংসার চালান। পাশাপাশি তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা দেখভালো করে চলেছেন।