কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্দি’হয়ে গল্প বলার স্বাধীনতা’চেয়েছেন নির্মাতা ও শিল্পীরা।তারা দাবি তুলেছেন,হাওয়া’সিনেমার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে,শনিবার বিকেল’সিনেমার সেন্সর ছাড়পত্র দিতে হবে।এ ছাড়াও আরও কয়েকটি দাবি তোলা হয়েছে।বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলা চলচ্চিত্র বা কনটেন্টে সেন্সরশিপ খড়গ,গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত এই সভায় হাওয়া নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে বন বিভাগের মামলা,শনিবার বিকেল’র সেন্সর ছাড়পত্র না দেওয়াসহ ৫টি দাবি তোলেন শিল্পী-কলাকুশলীরা।সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং হাসিনা এ ডটারস টেল’চলচ্চিত্রের নির্মাতা পিপলু আর খান দাবিনামা তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো :-
১. হাওয়া,চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
২. শনিবার বিকেলে’চলচ্চিত্র কেন সেন্সর ছাড়পত্র পেল না,তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।
৩. বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বাতিল করতে হবে এবং প্রস্তাবিত চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ক্ষেত্রে সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৪. প্রস্তাবিত ওটিটি নীতিমালার ক্ষেত্রে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ওটিটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. চলচ্চিত্র বা কনটেন্ট বিষয়ক কোনো মামলা দায়ের করার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের(যেমন-খসড়া ওটিটি নীতিমালায় প্ল্যাটফর্মগুলোতে আলাদা কমিশন বোর্ড তৈরির প্রস্তাব আছে,এ জাতীয় কোনো কর্তৃপক্ষের)সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে।সভায় বক্তারা বলেন,নীতিমালা হোক,কিন্তু নিয়ন্ত্রণমালা নয়।যদি সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্য দিয়ে সুন্দর পরিবেশ দেওয়া যায়,তাহলে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প আগামী ৫বছরে ৫০হাজার থেকে ১লাখ কোটি টাকার বাজার তৈরি করতে পারবে।নির্মাতা ও শিল্পীরা বলেন,আমরা এখন এক ধরনের ভীতির মধ্যে রয়েছি।এই অবস্থায় ভালো সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভবপর নয়।সেই কারণেই আমরা সভার এমন মঞ্চ তৈরি করে এসেছি।
সভা থেকে জানানো হয়,এসব দাবিতে শিগগিরই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।সেই সঙ্গে সেপ্টেম্বর মাসে এই বিষয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হবে।
সভায় হাওয়া’র নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন বলেন,সিনেমায় একটা অবাস্তব দৃশ্যকে বাস্তব করে দেখানোর চেষ্টা করেছি।সাময়িক সময়ের জন্য সেই পাখিটিকে খাঁচায় বন্দি করা হয়েছে,আবার সেটাকে অবমুক্ত করেছি।কিন্তু পাখিটিকে অবমুক্ত করার পর এখন দেখছি আমি নিজেই বন্দি হয়ে গেছি।নতুন সিনেমা নিয়ে যখন ভাবতে যাই,প্রথম মাথায় আসে এটা করা যাবে না,ওটা বলা যাবে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সমালোচনা করে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন,বন উজার হচ্ছে,কাঁটাবনে আমরা পশুপাখি আটকে রাখছি।সেখানে বন অধিদপ্তর কোথায়?সিনেমায় এটা দেখানো যাবে না,ওটা করা যাবে না-এত শর্ত নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা কি সম্ভব?এভাবে তো হয় না।এভাবে সিনেমা নির্মাণ করা যায় না।গল্প বলা যায় না।স্বাধীন বাংলাদেশে এত কালা কানুন কেন?
সভায় আরও বক্তব্য দেন-নাট্যব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ,চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম,অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা তারিক আনাম খান,নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী,অভিনেতা জাহিদ হাসান,নির্মাতা অমিতাভ রেজা,কামার আহমেদ সাইমন,অভিনেতা আফরান নিশো প্রমুখ।
আরও উপস্থিত ছিলেন-সাজু খাদেম,ইরেশ যাকের,জাকিয়া বারী মম,আফসানা মিমি,আজমেরি হক বাঁধন,গিয়াস উদ্দিন সেলিম,ইরেশ যাকের,নুরুল আলম আতিকসহ অনেকে।