তিনি বলেন,প্রথমে তিনজন ডাকাত বাসচালকের কাছে গিয়ে তাকে জিম্মি করে।চালকের গলায় ছুরি চেপে ধরে সিট থেকে উঠতে বলে।একপর্যায়ে তারা চালককে বেঁধে ফেলে।এ সময় তারা আমার পাশের সিটে বসা হেলপারকে তুলে নেয়।আমার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়।একপর্যায়ে তারা আমার হাত-মুখ- চোখ বেঁধে ফেলে এবং ধর্ষণ করে।
ওই নারী বলেন,ডাকাতরা যার কাছে টাকা বেশি পেয়েছে তাকে কিছু বলেনি।সবার কাছ থেকে টাকা,মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কারসহ সবকিছু লুটে নেয়।একজন মহিলা তার স্বামীকে ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন।ডাক্তার দেখানোর জন্য তার কাছে থাকা সব টাকাও তারা কেড়ে নেয়।
জবানবন্দিতে ওই নারী ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন,ঘটনার সঠিক বিচার না হলে আজ এক নারীর সঙ্গে যা ঘটেছে কাল আরেক নারীর সঙ্গেও তা ঘটবে।আমি ওদের ফাঁসি চাই।যাতে ওদের দেখে অন্যরা ভালো হয়ে যায়।মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের একটি বাস ২৪যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।গভীর রাতে সিরাজগঞ্জ পৌঁছালে সেখান থেকে একদল ডাকাত যাত্রীবেশে ওই বাসে ওঠে।বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পাড় হওয়ার পর অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের বেঁধে ফেলে।এ সময় দলটি বাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল,নগদ টাকা,স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেয়।একপর্যায়ে তারা বাসযাত্রী ওই নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন।বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টা তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখেন।পরে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালির স্তূপে বাসটি ফেলে পালিয়ে যান।মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা দেওয়ার পরও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাননি ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের নারী যাত্রী।
বার বার আকুতি জানানোর পরও তাকে ধর্ষণ না করে ছাড়েনি ডাকাত দল।একে একে ছয়জন ডাকাত ওই নারীকে ধর্ষণ করেন।বর্তমানে ওই নারী টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।বৃহস্পতিবার(৪আগস্ট)সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী জানান,তিনি ঢাকার নারায়ণগঞ্জে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন তিনি।বাসটি রাত সাড়ে ৮টায় যাত্রা শুরু করে।রাত সাড়ে ১১টায় সিরাজগঞ্জে একটি হোটেল যাত্রাবিরতি দেওয়ার পর আবার রওনা দেয় বাসটি।বাসটি গেটলক সার্ভিস থাকলেও রাস্তায় সিগনাল দিয়ে তিন দফায় ১০জন তরুণ ওঠেন বাসে।বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর তিনিসহ বাসে থাকা অন্য যাত্রীদের হাত,পা,মুখ বেঁধে ফেলেন যাত্রীবেশে ওঠা ডাকাত দল।এরপর একে একে সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন,স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করতে থাকে।ভুক্তভোগী নারী ছিলেন মাঝখানের দিকের সিটে।এক ডাকাত এসে তার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন।বাসে থাকা শিশুদেরও হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়।কাউকে মারধরও করা হয়।কিছুক্ষণ পর আরেক ডাকাত এসে ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করতে থাকেন।তিনি বিপদ আঁচ করতে পেরে বার বার ছেড়ে দিতে আকুতি জানান।কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।একে একে ছয়জন ডাকাত তাকে ধর্ষণ করেন।
তিনি আরো জানান, তার মতো আর কেউ বাসটিতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না,তিনি বলতে পারবেন না।কারণ, তারসহ সবারই চোখ বাঁধা ছিল।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা.রেহানা পারভীন জানান,প্রথামিকভাবে ধর্ষণের কিছু আলামত পাওয়া গেছে।তবে আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সোয়াব পাঠানো হয়েছে।টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান,ভুক্তভোগী নারী যাত্রীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে ডাকাতি ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন।এ ঘটনায় বাসচালক রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে।ধারণা করা হচ্ছে,তিনি ডাকাত দলের সদস্য।রাজা প্রাথমিকভাবে পুলিশকে জানিয়েছেন,ডাকাতির সময় তিনি পুরো তিন ঘণ্টা বাস চালিয়েছেন।তিনি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত নন।অন্যরা ওই নারীকে ধর্ষণ করেছেন।গ্রেফতারকৃত রাজাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।