জ্বালানি সঙ্কটের প্রভাব এবার সরাসরি আঘাত করছে শিক্ষা সেক্টরকে।সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও সিদ্ধান্তের পাশাপাশি এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বিদ্যুৎ ব্যবহারে লাগাম টানা হচ্ছে।যদিও স্কুল-কলেজে দিনে ক্লাস-পরীক্ষা চলাকালে সামান্যতমই বিদ্যুতের ব্যবহার হয়।কেননা দিনে শুধু ফ্যান ছাড়া আর কোনোভাবে বিদ্যুতের তেমন ব্যবহার নেই। এর মধ্যে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে বা কলেজে বৈদ্যুতিক ফ্যানেরও ব্যবস্থা নেই।এই অবস্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে কিংবা সাশ্রয় করতেই সপ্তাহে তিন দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সরকারের জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, পরিবহন খাতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সরকার বেশ কিছু বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।যার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ রাখা।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ায় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে চায় সরকার।সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ রাখলে গাড়িতে জালানি তেলের ব্যবহারও কম হবে।অন্য দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে।
এ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ের এমন প্রস্তাবের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর তীব্র ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষাবিদ,অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা।তারা অনেকেই বলছেন,করোনার কারণে দীর্ঘ আড়াই বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে পড়েছে।বেশ কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষাও সময়মতো অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।আবার কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিলও করা হয়েছে।এই অবস্থায় এখন যদি সপ্তাহে তিন দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয় তাহলে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাই পিছিয়ে যাবে।আর এই দীর্ঘ মেয়াদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ারও কোনো বিকল্প থাকবে না।
স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে দেশে এই মুহূর্তে কতটুকু বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব হবে এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট জ্বালানি কর্মকর্তার কাছে।কেননা কোভিডের কারণে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।এর মধ্যে আবার স্কুল-কলেজে নতুন করে ছুটি বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে কিনা-প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান,আমরা শুধু এই ধরনের সুপারিশ করব।বাকিটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন,সপ্তাহে তিন দিন বাসায়ও শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারবে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ রাখলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।জালানি বিভাগ আরো যেসব বিষয় নিয়ে ভাবছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদেশের আদলে কার হলিডে দেয়া।অর্থাৎ সপ্তাহে একদিন গাড়ি বন্ধ রাখা।
সপ্তাহে তিন দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের প্রস্তাবের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করীম নয়া দিগন্তকে বলেন,যেহেতু এটা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে,এখনো বাস্তবায়ন শুরু হয়নি,তাই আমরা অপেক্ষা করছি।আমরা দেখব সরকার আসলেই কিভাবে এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের দিকে এগোতে চায়।তবে এটা ঠিক যে,করোনার দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্থীরা এমনিতেই অনেক পিছিয়ে পড়েছে। তাই এখন যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আরো বেগ পেতে হবে।
অভিভাবক ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু বলেন,স্কুল-কলেজে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় এটা কমিয়ে সরকার খুব বেশি বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারবে বলে মনে হয় না।কেননা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুব কমই বিদ্যুতের ব্যবহার হয়।এটা না করে বরং সরকার অন্য দিকের বিদ্যুতের অপচয় কমিয়েই সাশ্রয় করতে পারে।আমরা চাই শিক্ষা সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি না বাড়িয়ে বরং বিকল্প পথ খুুঁজে বের করা।