ভারতের ১৫তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু।সোমবার(২৫জুলাই)দেশটির রাজধানী দিল্লিতে শপথ নেন তিনি।আর এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আদিবাসী প্রেসিডেন্ট পেল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।
এর আগে রোববার শেষ হয় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ।সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়,নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুর শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে যাবতীয় প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন করা হয়। দিল্লির সেন্ট্রাল হলে অনুষ্ঠিত এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি,উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু,লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা,কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী,একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের প্রধান বিচারপতি এনভি রমন দ্রৌপদীকে শপথবাক্য পাঠ করান।শপথ গ্রহণের পর দ্রৌপদী মুর্মু বলেন,আমার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া প্রমাণ করে যে,ভারতের দরিদ্ররা স্বপ্ন দেখতে এবং স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।
এর আগে ভোটাভুটির মাধ্যমে ভারতের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন দেশটির ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের প্রার্থী আদিবাসী সাঁওতাল নারী দ্রৌপদী মুর্মু।গত বৃহস্পতিবার তিন দফায় ভোট গণনা শেষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়।
এতে ৫০শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে ভারতের প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।আর এরপরই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যশবন্ত সিনহা পরাজয় স্বীকার করে নেন।
দ্রৌপদী মুর্মু পেশায় শিক্ষক ছিলেন।৬৪বছর বয়সী ভারতের ওড়িশা রাজ্যের এই আদিবাসী নারী গত কয়েক দশক ধরে বিজেপির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।ঝাড়খণ্ড প্রদেশের প্রাদেশিক গভর্নর হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন তিনি।
ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি কে এই দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ নিয়েছেন সাঁওতাল নারী দ্রৌপদী মুর্মু।তিনি প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন ২০১৭সালে।ওই সময় ওড়িশার এই আদিবাসী নারীকে দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির(বিজেপি)প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।তিনি তখন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
দ্রৌপদী মুর্মুর জন্ম ১৯৫৮সালে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামে।ভারতের অন্যতম বৃহৎ আদিবাসী গোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সদস্য তিনি।একজন গ্রাম পরিষদ প্রধানের কন্যা মুর্মু রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরের রামাদেবী মহিলা কলেজে পড়াশোনা করেন।
ওড়িশা সরকারের একজন কেরানি হিসাবে কর্মজীবন শুরু হয় মুর্মুর।১৯৭৯থেকে ১৯৮৩সাল পর্যন্ত সেখানকার সেচ ও জ্বালানি বিভাগের জুনিয়র সহকারী হিসাবে কাজ করেন তিনি।শাশুড়ির পীড়াপীড়িতে ভুবনেশ্বরে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর পরিবারের দেখভালের জন্য রায়রাংপুরে ফিরে আসেন দ্রৌপদী।পরে শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন তিনি।
দ্রৌপদীর রাজনীতিতে পথচলা শুরু হয় ১৯৯৭সালে।ওই বছর তিনি রায়রাংপুরের স্থানীয় নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।তাকে প্রায়ই ড্রেন পরিষ্কার থেকে শুরু করে আবর্জনা অপসারণের সময়ও রোদে দাঁড়িয়ে শহরের স্যানিটেশন কাজের তত্ত্বাবধান করতে দেখা যায়।
বিজেপির সদস্য হিসেবে তিনি রায়রাংপুর আসনে দু’বার বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন-২০০০এবং ২০০৯সালে। ২০০০থেকে ২০০৪সাল পর্যন্ত তিনি বিজু জনতা দল পার্টির নবীন পট্টনায়কের নেতৃত্বে রাজ্যের জোট সরকারের মন্ত্রী হন। প্রাথমিকভাবে বাণিজ্য ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দফতর সামলান তিনি।পরে রাজ্যের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীও হন তিনি।
২০০৬থেকে ২০০৯সাল পর্যন্ত ‘তফসিলি উপজাতির বিজেপির রাজ্য শাখার সভাপতি ছিলেন মুর্মু।ভারতের সংবিধানে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সম্প্রদায় হিসেবে এই আদিবাসী গোষ্ঠীর স্বীকৃতি রয়েছে।২০০৯সালে দুঃখজনক মোড় নেয় দ্রৌপদীর জীবন;রহস্যজনক এক পরিস্থিতিতে বড় ছেলেকে হারিয়ে ফেলেন তিনি।এর কয়েক বছর পর দ্বিতীয় ছেলে এবং স্বামীকেও হারান তিনি।
নিজেকে সামলে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করেন মুর্মু।২০১৫সালে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের প্রথম নারী গভর্নর নিযুক্ত হন তিনি।গত বছরের জুলাই পর্যন্ত ছয় বছর এই পদে আসীন ছিলেন তিনি।আর এবার ভারতের প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাসের অংশ হলেন দ্রৌপদী মুর্মু।