যে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষমতায় এসেছি তা বাস্তবায়ন করতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

ছবি:দৈনিক তোকদার নিউজ পোটাল থেকে,যে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষমতায় এসেছি তা বাস্তবায়ন করতে চাই : প্রধানমন্ত্রী
News
অনলাইন ডেস্ক :-


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছে।নির্বাচনী ইশতেহারের কথা মাথায় রেখেই প্রতিবার বাজেট প্রণয়ন করা হয় এবং কোন কাজ করা হলো বা হলো না তা পর্যালোচনা করা হয়।গতকাল রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) সাক্ষর এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন পুরস্কার ২০২২ ও শুদ্ধচার পুরস্কার ২০২২ বিতরণ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।এ সময় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছি সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই।আমরা রাজনীতি করি,আমাদের দল আছে।আমরা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি,একটা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করি।যে ইশতেহারে আমরা এ দেশকে কীভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করবো সেই নির্দেশনা বা কর্ম পরিকল্পনার কাঠামো থাকে।কাজেই আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে কখনো আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারটা কিন্তু ফেলে দেইনি।অনুসরণ করেই কিন্তু আমাদের কর্মপরিকল্পনা কী নেব,কতটুকু আমরা সফল করতে পারলাম আর কতটুকু করা বাকি আছে সেটাও কিন্তু আমরা নির্দিষ্ট করি।আমাদের দলেরও একটা ঘোষণাপত্র থাকে,গঠনতন্ত্র থাকে,সেখানেও কতগুলো দিক নির্দেশনা থাকে।সেটা আমরা কিন্তু বাস্তবায়ন করি এবং আমাদের যখন দলের সম্মেলন হয় তখন আবার আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করি,সেখানেও আমরা কতটুকু কাজ সম্পন্ন করতে পারলাম,আর কী কী বাকি আছে বা আরও নতুন কী কী করা যেতে পারে।তারই ওপর ভিত্তি করে আমরা কাজ করি।দেশকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনা করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,আমরা এখন ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছি।তিনি বলেন, ৮১ সালে আসার পর, সারা বাংলাদেশ যখন ঘুরেছি, মানুষের গায়ে কাপড় নেই,পরনে ছিন্ন একটা বস্ত্র,পায়ে কোনো জুতা-স্যান্ডেল নেই।তাদের শরীরে কোনো মাংস ছিল না-হাড় আর চামড়া ছাড়া।মনে হতো যেন একেকটা কঙ্কাল হেঁটে বেড়াচ্ছে।এ রকম বিভিন্ন এলাকায় আমি নিজে আমার সচক্ষে দেখেছি। স্বাভাবিকভাবে আমাদের লক্ষ্যই ছিল এই মানুষগুলোর ভাগ্য আমাদের পরিবর্তন করতেই হবে।প্রথম পাঁচ বছরে আমাদের প্রচেষ্টাই ছিল অন্তত তাদের গায়ে একটু কাপড় হবে।পায়ে নিদেনপক্ষে এক জোড়া রাবারের চপ্পল হলেও হবে।কিন্তু সেটুকু আমরা করতে পেরেছিলাম।তারপরে মাঝখানে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি এটা ঠিক।

পদ্মা সেতু আত্মমর্যাদার প্রতীক : শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে আমাদের ওপর একটা বদনাম দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।শুধু সরকার বা রাষ্ট্রের ওপরে না,এমনকি আমার পরিবার,আমার ছোট বোন,আমার ছেলে-মেয়ে,বোনের ছেলে কেউ কিন্তু বাদ যায়নি।আমার মন্ত্রী,সচিব,উপদেষ্টা,প্রত্যেকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল,একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে।কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে বিশ্বাস ছিল।তিনি বলেন,একটা পর্যায়ে আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব।এটা আসলে আমাদের মতো দেশে অনেকে বিশ্বাস করতে পারেনি।দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে দীর্ঘদিন সামরিক শাসন চলাকালীন আমাদের এত বেশি পরনির্ভরশীল করে ফেলা হয়েছিল যে আমাদেরও যে একটা শক্তি আছে,স্বকীয়তা আছে বা আমাদের কর্মক্ষমতা আছে বা চিন্তাচেতনা আছে,সেটাই যেন মানুষ ভুলতে বসেছে।এটাই সব থেকে দুর্ভাগ্যের।

সার্কুলার রোড নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর : পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকার যানজট তীব্র হচ্ছে। রাজধানী যানজটমুক্ত রাখতে দ্রুত সার্কুলার রোড করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।একই সঙ্গে রাজধানীর ভিতরের কাঁচা বাজারগুলো সরিয়ে ঢাকার প্রান্ত এলাকা কাঁচপুর,আমিন বাজার,কেরানীগঞ্জসহ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে এ সভা হয়।প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে সভাপতিত্ব করেন।খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন,প্রধানমন্ত্রী দুটি বিষয়ে নির্দিষ্ট করে নির্দেশনা দিয়েছেন।পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে যে ট্রান্সপোর্ট হবে সেটা স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানে অনুমোদন করা হয়েছে।ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে,যাতে ঢাকা শহরে কোনো গাড়ি না ঢোকে।দ্বিতীয়টি হলো,যেহেতু দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের সঙ্গে আমাদের একটা যোগাযোগ হয়ে যাচ্ছে,বিপুল পরিমাণ পণ্য এখন ঢাকা শহরে আসা শুরু করবে বা চট্টগ্রামের দিকে যাবে।সে ক্ষেত্রে ঢাকা শহরে যে কাঁচামালগুলো আসবে সেগুলো অধিকাংশই কারওয়ান বাজারে যাবে।এ অবস্থায় কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারটি দ্রুত সরিয়ে নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।প্রয়োজনে কেরানীগঞ্জ,সায়েদাবাদ,আমিনবাজার কিংবা মহাখালীর দিকে কাঁচাবাজার স্থাপন করতে হবে।সেখান থেকে পণ্য যদি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা যায় তাহলে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শেষে ডিপিপি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন,এটার ডিপিপি হচ্ছে।দ্রুতই সেটা শেষ হবে।পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত-জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,এটা নিয়ে ওনারা (কর্তৃপক্ষ) কাজ করছেন।পদ্মাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্যামেরা বসবে,স্পিডগানও বসানো হচ্ছে।এগুলো বসলে তারপর ওনারা সুবিধা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন,কী করা যায়।ঈদের আগে চালু হতে পারে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন,ঈদের আগে হওয়া খুব ডিফিকাল্ট মনে হচ্ছে।ঈদের আগে মনে হয় না।উল্লেখ্য,পদ্মা সেতু চালুর পরদিন অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেলও চালু হয়েছিল।তবে এক দিন পরই পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় অভিনন্দন প্রস্তাব আনা হয় বলে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়,বিশেষ করে জনগণ যেভাবে সহায়তা দিয়েছে এবং তাঁকে উৎসাহ দিয়েছে,সেটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে।একই সঙ্গে তিনি পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।সেতুতে পায়ে হাঁটা প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,পদ্মা ব্রিজে মানুষের হাঁটার কোনো স্কোপ নেই।কোনো ফুটপাত রাখা হয়নি।এখানে চলাফেরার কোনো সিস্টেমও নেই।এখন সেতুতে অনেকে হাঁটছেন।পরশুদিন রাতেও আমাকে ফোন করেছে,তিন-চারজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে।গাড়ির জরিমানা দিতে পারেনি,এগুলো কিন্তু আরও কঠোরভাবে দেখা হবে।সেতুর নাট-বল্টু খুলে টিকটক ভিডিও বানিয়ে ভাইরাল হওয়া যুবক পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,স্ক্রু খোলার কথাটা আসছে,ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যার্ডাডে আমাদের যে ওয়ালটুকু আছে অতটুকু দিয়েই গাড়ি চলে।কিন্তু আমাদের রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের স্ট্যার্ডাড ৪ ফুট।সেজন্য আরও এক ফুট উঁচু করে রেলিং দেওয়া হয়েছে।এটা মানুষের সেফটির জন্য নয়,এটা আমাদের স্ট্যার্ডাডটাকে কাভার করার জন্য। সেতু উদ্বোধনের দিন বিকালে কোরিয়ান এক্সপ্রেস করপোরেশন টেকওভার করেছে।তারা হলো ওয়ার্ল্ডের বেস্ট কোম্পানি,যারা হাইওয়ে ও ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট করে।ওরা ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ইনচেন ব্রিজের ডিজাইনার ও টোল ম্যানেজমেন্ট করে।ওদের ওই ব্রিজে লোকজন হাঁটতে পারে না।এখন তারা অডিট করবে।প্রত্যেকটা জয়েন্ট আছে,নাট আছে।অডিট করে নিজেরা ঠিক করতে পারে,টাইট করে দেবে।সুতরাং বিভিন্ন জায়গায় যে কনফিউশন আছে,এটার সঙ্গে সেফটি-সিকিউরিটির কোনো সম্পর্ক নেই।