মাঠজুড়ে ধান গাছ থাকলেও তাতে ধান নেই। একটি থোকায় ২/৩টি ধানের শীষ থাকলেও সব চিটা হয়ে গেছে। কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে অন্য অলের বীজ দেওয়ায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমির ধানে ফলন না থাকায় মাঠে মারা পড়েছেন পীরগাছা উপজেলার ২০ জন কৃষক।দুটি নামিদামি কোম্পানীর বীজ নিয়ে চারা রোপন করে তারা এখন নি:স্ব। ধান তো দুরের কথা খড়ও হয়নি জমিগুলোতে। ব্র্যাক সীড ও মেটাল সীড কোম্পানীর ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়ে অভিযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে।সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলার তালুক ইসাদ (নয়াটারী) গ্রামে প্রায় ৫০ হেক্টর আলুর জমিতে দেউতি বাজারের ব্র্যাক সিডস ডিলার ‘মেসার্স শামীম সিডস স্টোর’ থেকে চলতি বোরো মৌসুমের জন্য ব্র্যাক সীড কোম্পানীর ৪৪৪ ও মেটাল সীড কোম্পানীর এমএস-১ হাইব্রীড জাতের ধান কিনে বীজ করে লাগান ওই গ্রামের ২০ জন কৃষক। প্রথম দিকে ধানের চারা ভালো মনে হলেও বয়স বাড়তে থাকলে ঘটে চরম বিপত্তি। ধানের গাছ ছোট-বড় হয়ে বাড়তে থাকে। এরপর শেষ সময়ে জমিগুলোতে ২/১টি করে ধানের শীষ বের হলেও তাতে ধান নেই। সব চিটা হয়ে গেছে। ওই জমিগুলোর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক সাড়ে ১২ একর জমিতে ধান রোপন করেন দেউতি গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে কৃষক হাসান আলী। তার মতো মৌসুম ভিত্তিক চুক্তি নিয়ে ধান চাষ করেন কৃষক নাজমুল ইসলাম, আলাল মিয়া, জহির উদ্দিন, আউয়াল মিয়া, খোরশেদ আলম, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম, মোজাফ্ফর হসেন ও আবুল হোসেনসহ প্রায় ২০ জন কৃষক। সবার জমির একই চিত্র।কৃষক খোরশেদ আলম, নাজমুল ইসলাম বলেন, জমি চুক্তি নিয়ে ধারদেনা করে ধান লাগিয়েছি। যাতে কিছুদিন ভালো চলতে পারি। সেই আশা আমাদের ধুলিসাৎ করে দিয়েছে এই দুটি কোম্পানীর বীজ। অন্য অ লের জন্য তৈরি বীজ আমাদের দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রতি ২২ শতক জমিতে ৫ কেজি ধানও হবে না। এখন কোম্পানীর লোকজন তালবাহানা করছে।আরেক কৃষক হাসান আলী বলেন, ভাই আমি একাই সাড়ে ১২ একর জমিতে ধান করেছি। ধান তো দুরের কথা খড়ও নাই জমিতে। আমি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। এর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই। অন্যথায় মামলা করবো।অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার ওই জমিগুলো পরিদর্শন করেন রংপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রাকিবুল আলম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামানসহ বীজ কোম্পানীর প্রতিনিধিগণ।ব্র্যাক ও মেটাল সীড কোম্পানীর ডিলার মেসার্স শামীম সীডস স্টোরের স্বত্বাধিকারী শামীম হোসেন বলেন, বিরুপ আবহাওয়া ও দেরীতে চারা রোপন করায় এমন হয়েছে। তবুও আমরা কোম্পানীর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা জমিগুলো পরিদর্শন করে গেছেন।ব্র্যাক সীড কোম্পানীর রংপুরের মনিটরিং কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হাসান বলেন, বীজের কারণে এমন হওয়ার কথা নয়। অতিবৃষ্টিতে আবহাওয়াগত কারণে এবং দেরিতে চারা রোপনের কারণে এমনটি হয়েছে। একই সমস্যা বেশ কিছু জায়গায় হয়েছে।একই ধরনের সমস্যার কথা বলেন মেটাল সীড কোম্পানীর উৎপাদন ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার। তিনি বলেন, একই বীজ কোথায় ভালো হয়েছে, আবার কোথায় একই সমস্যা।এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল আলম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা জমিগুলো পরিদর্শন করে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে এনেছি। দ্রুত আমরা উধ্বর্তন কর্মকর্তার নিকট প্রতিবেদন জমা দিব।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রাকিবুল আলম বলেন, ক্ষতির পরিমানটা অনেক বেশি। আমি মাঠে গিয়ে কৃষক ও বীজ কোম্পানীর প্রতিনিধির সাথে কথা বলে এসেছি। চলতি সপ্তাহে কৃষি অধিদপ্তর থেকে একটি প্রতিনিধি দল আসবে। তারা পরিদর্শন করে গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
★প্রকাশক:- মোঃ মোশারফ হোসেন তোকদার।
★ব্যবস্থাপনা পরিচালক:- মোঃ এম,খোরশেদ আলম,সভাপতি প্রেসক্লাব পীরগাছা,রংপুর বিভাগ।
© All rights Reserved © 2020 গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত এই ওয়েবসাইটি Tokdernews.com বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পোর্টাল।