মোঃ সুমন মিয়া(২৯)অনেক আশা নিয়ে কয়েক বছর আগে নিজের জমানো অর্থের স্থানীয় বাজারে কাঠ ফার্নিচার ব্যবসায়ী শুরু করেন।
ফার্নিচার ব্যবসা প্রসার করতে বেশ কয়েকটি এনজিও থেকে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি।
তার আশা ছিল ব্যবসায় ভালো মুনাফা করে পরিবারের আনুসাঙ্গিক খরচ ব্যয় করে স্ত্রীও সন্তানের জন্য শহরে বাড়ী এবং আবাদী জমি কিনবেন।
কিন্তু সেই আশা তার পুরণ হলো না।করোনার কারণে গত দুইবছর ধরে কাঠ ফার্নিচার ব্যবসায় মন্দায় নিজের পুজি শেষ হয়ে যায়।
এদিকে পুজি শেষ হয়ে গেলে বাড়তে থাকে এনজিওর কিস্তির চাপ।আর কিস্তির চাপ সহ্য করতে না পেরে নিজ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের গোডাউন ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী সুমন মিয়া।
গত মঙ্গলবার রাতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের মীরবাগ বাজারে এ ঘটনা ঘটে।সুমন মিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের উপজেলার মহেশা গ্রামের মোস্তাফিজার রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়,সুমন মিয়ার মীরবাগ বাসস্ট্যান্ডে সুমি ফার্ণিচার নামে একটি দোকান আছে।ব্যবসা ব্যাপক প্রসার করতে বিভিন্ন এনজিও থেকে কয়েক লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি।
প্রতি মাসে তাকে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।
করোনা পরিস্থিতিতে গত দুইবছর ধরে ব্যবসা মন্দা গেলেও প্রতিমাসে পরিবারের খরচও দোকানের কর্মচারীদের বেতনভাতাও এনজিরও কিস্তি পরিশোধ করতে তাঁর পুজি শেষ হয়ে যায়।
এরপর বাড়তে থাকে ঋনের বকেয়া কিস্তির চাপ বাড়তে থাকে।এতে করে সুমনের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়।
ঋনের কিস্তির চাপ সহ্য করতে না পেরে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সুমন বাজারে তার নিজের দোকানের গোডাউনে গলায় ফাঁস দেয়।
পরে দোকানের কর্মচারীরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় পল্লী চিকিসকের কাছে পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি।
কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য বাবুল মিয়া বলেন,ব্যবসায় মন্দা ও একাধিক ঋণ থাকায় সমুনের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হওয়ায় সে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে সে(সুমন)ঋণের বোঝা পরিবারের উপর চাপিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করলো।কারণে এনজিও তো ঋণ দেওয়ার সময় পরিবারের লোকজনের অঙ্গিকারনামা নেয়।
যদি ঋণ গ্রহীতা মারা যায় তাহলে পরেবারের লোকজনকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।নিহত সুমনের মা সেকেন বানু বিলাপ করতে করতে বলেন,ছেলের আশা আছিল কাঠের ফার্নিচার ব্যবসা করে অনেক বড় ব্যবসায়ী হবে।
শহরে বাড়ী করবে।সেখানে বাবা,মাও স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বসবাস করবে।গ্রামে আবাদী জমি কিনবে।মোড় ছেলে সেই আশা আর পুরণ হলো না।
দোকানে লোকশান আর কিস্তির জ্বালায় মোড় ছেলেটা আত্মহত্যা করলো।কাউনিয়া থানার ইন্সপেক্টর(তদন্ত)সেলিমুর রহমান বলেন,বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে কয়ের লক্ষ টাকা ঋণ করেছেন ওই যুবক।
প্রতি মাসে তাকে ৪০ হাজার টাকার মতো কিস্তি দিতে হয়।ব্যবসায়িক মন্দা এবং ঋণের কিস্তির চাপে মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে নিজ দোকানের গোডাউনে ধর্নার সঙ্গে দড়ি বেঁধে গলায় পেচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সুমন।
এসময় দোকানের কর্মচারীরা টের পেয়ে তাকে ধর্না থেকে নামিয়ে ফেলে।পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান।
ওসি তদন্ত আরও জানান,এ ঘটনায় পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায়ে মুচলেকা নিয়ে মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।তবে এ ব্যাপারে কাউনিয়া থানায়ে একটি ইউডি মামলা হয়েছে।